আজ সাজা ঘোষণা

চিত্তরঞ্জন খুনে দোষী সাব্যস্ত মনিরুল ঘনিষ্ঠ

বৃহস্পতিবার সরকারি পক্ষের আইনজীবী মহম্মদ সামসুজ্জোহা বলেন, “চিত্তরঞ্জন মণ্ডলকে খুনের দায়ে গোপাল শেখ এবং সালাম শেখকে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যাস্ত করেছেন বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী। আজ শুক্রবার বিচারক দোষীদের সাজা ঘোষণা করবেন।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০২
Share:

লাভপুরের তৃণমূল নেতা চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের খুনে দোষী সাব্যস্ত হল এলাকারই দলীয় বিধায়ক মণিরুল ইসলামের মদত পুষ্ট গোপাল শেখ এবং তার এক সাগরেদ সালাম শেখ। আজ শুক্রবার, বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরী তার সাজা ঘোষণা করবেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সরকারি পক্ষের আইনজীবী মহম্মদ সামসুজ্জোহা বলেন, “চিত্তরঞ্জন মণ্ডলকে খুনের দায়ে গোপাল শেখ এবং সালাম শেখকে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যাস্ত করেছেন বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী। আজ শুক্রবার বিচারক দোষীদের সাজা ঘোষণা করবেন।”

২০১২ সালের ১৭ নভেম্বর লাভপুর থানার ব্রাহ্মণী গ্রামের বাসিন্দা, তৃণমূলের স্থানীয় বুথ কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মণ্ডল খুন হন। ঘটনা হল, চিত্তরঞ্জন মণ্ডল ও তাঁর বন্ধু রাজীব ঘোষ ধান কাটার জন্য মুনিষ খুঁজতে সন্ধ্যাবেলা আপনাহার গ্রামে গিয়েছিলেন। ওই সময়ে কাশিয়ারা গ্রামের কাছে গোপাল শেখ ও সালাম শেখ-সহ জনা তিরিশ দুষ্কৃতী তাঁদের উপর চড়াও হয়। চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের ওপর আচমকা হামলা করে তারা।

Advertisement

ওই সময় রাজীববাবু কোনওভাবে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের বিষয়টি জানান। খবর যায় তাঁর বাবা ধ্বজাধারী মণ্ডলের কাছেও। তিনি ও স্থানীয়রা এসে চিত্তরঞ্জনবাবুকে উদ্ধার করেন। ওই রাতে সংকটজনক অবস্থায় প্রথমে তাঁকে বোলপুর ও পরে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে এসএসকেএম নিয়ে যাওয়ার পথে চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের মৃত্যু হয়।

লাভপুরের ব্রাহ্মণী গ্রামে খুন হওয়া চিত্তরঞ্জনবাবু তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী গোষ্ঠীর কর্মী বলে পরিচিত ছিলেন। অন্য দিকে তার কিছু দিন আগেই খুন হওয়া অন্য তৃণমূল কর্মী আরমান শেখ আবার অনুব্রতবাবুর ঘনিষ্ঠ জেলা সম্পাদক সুব্রত ভট্টাচার্যের অনুগামী। তৃণমূলের তত্‌কালীন নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ সে সময় অভিযোগ করেছিলেন, “আরমানরা আসলে সিপিএমের। লুটেপুটে খাওয়ার জন্য আমাদের দলে ঢুকেছিল।” সে সময় তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি ছিল, “দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই আমাদের দলের কর্মী আরমানকে খুন করেছে।” এলাকার সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমান অবশ্য তখন দাবি করেছিলেন, “আমাদের কেউই জড়িত নন পুরোটাই তৃণমূলের নিজেদের গণ্ডগোল”

ঘটনা হল, গোপাল শেখ সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। চিত্তরঞ্জনকে খুনের পরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী এবং তৃণমূল সমর্থকদের একটা বড় অংশ কাশিয়াড়া, পলশা, খয়েরবুনি গ্রামে গোপালের সাগরেদদের ২৬-২৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ক্ষোভের আঁচ পেয়ে সে সময় এলাকায় গিয়ে বীরভূমের তত্‌কালীন পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা স্থানীয় মানুষ ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।

তৃণমূলের অন্দরের সে সময়ই ব্যাখ্যা ছিল, বিধানসভা ভোটে লাভপুর কেন্দ্রের টিকিট পাওয়া নিয়ে বর্তমান এলাকার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম এবং দলের জেলা সম্পাদক, লাভপুরের বাকুল গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস ওঝার মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। মনিরুল এক সময় ফরওয়ার্ড ব্লক করতেন। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উপস্থিতিতে ওই দলে যোগ দেন। লাভপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীপদের অন্যতম দাবিদার দেবাশিসবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, বিশেষ ‘বোঝাপড়া’-র ভিত্তিতে অনুব্রতবাবু মনিরুলকে টিকিট পাইয়ে দেন। দুই গোষ্ঠীতে বিরোধ চরমে পৌঁছয়। চিত্তরঞ্জন-খুনের ঘটনায় তখন দলীয় বিভাজন আরও বেআব্রু হয়ে পড়ে।

খুনের পরের দিন লাভপুর থানায় গোপাল শেখ, সালাম শেখ-সহ ২৯ জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেন নিহতের বাবা। ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি গোপাল শেখ ও সালাম শেখ-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে নিহত চিত্তরঞ্জন মণ্ডলকে খুনের চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী রাজীব ঘোষ, তদন্তকারী অফিসার, চিকিত্‌সক-সহ মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement