কলেজ ভোটকে ঘিরে জেলার দুই মহকুমায় ইতিমধ্যেই গণ্ডগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। গত বারের অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তত্পর হল রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসন। শুক্রবার পুলিশ আধিকারিক, এলাকার সমস্ত কলেজের অধ্যক্ষ এবং রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক করলেন এসডিও উমাশঙ্কর এস।
ঘটনা হল, কলেজ ভোটকে ঘিরে রামপুরহাট মহকুমায় ইতিমধ্যেই উত্তেজনা রয়েছে। দিন কয়েক আগেই রামপুরহাট কলেজ চত্বর থেকে ছ’টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। ওই দিনই আবার কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে এক এবিভিপি সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে এ দিনই তাই মহকুমাশাসকের দফতরে একটি বৈঠকের যাক দেওয়া হয়েছিল। এ দিন ঘণ্টা দু’য়েকের বৈঠকের পরে তিনি বলেন, “যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে কলেজ ভোট মেটানো যা, তার জন্যই এ দিন বৈঠকে সবাইকে ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, দু’দিনের মনোনয়নপর্ব এবং ভোটের দিন কলেজ চত্বরের ২০০ মিটার মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। ভোট পর্বের ভিডিওগ্রাফি করা হবে। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুলিশেরও ব্যবস্থা করা হবে। বৈঠকে তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি এবং এসইউসি-র প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও কংগ্রেসের পক্ষে কাউকে আলতে দেখা যায়নি।
গত বছর জেলার ১৪টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ একক ভাবে ১২টি কলেজে জয়ী হয়েছিল। রামপুরহাট কলেজে ছিল তৃণমূল ছাত্রপরিষদ এবং ছাত্রপরিষদের জোটের দখলে। একমাত্র মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লপসা হেমব্রম কলেজেই এসএফআই ১৯টি আসনের প্রত্যেকটিতেই মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছিল। কিন্তু, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন তৃণমূল নেতাদের দাপটে কলেজ চত্বরেই সংগঠনের পড়ুয়ারা কলেজে ঢুকতে পারেনি বলে অভিযোগ। ওই দিন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে সিপিএমের ময়ূরেশ্বর জোনাল সম্পাদক অরুপ বাগকে মারধর করার অভিযোগও উঠেছিল। আবার মুরারই কবি নজরুল কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার দিন বহিরাগতদের বাধায় মনোনয়নপত্র তুলতেই পারেনি ছাত্র পরিষদ। টিএমসিপি সেটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে। যদিও হাইকোর্টে ছাত্র পরিষদের দায়ের করা মামলার জেরে ওই নির্বাচন বাতিল হয়ে গিয়েছি। সম্প্রতি ফের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ মুরারই কলেজ দখল করে।
এ বার যদিও জেলার কলেজ ভোটের চিত্রে একটা বদল দেখা যাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে জেলার সর্বত্র বিজেপি প্রভাব বাড়ছে। এ বছরের কলেজ ভোট বিজেপি-র কাছে কতকটা যেন আগামী পুরভোটের মহড়া। সে দিক থেকে দেখলে রামপুরহাট, মল্লারপুর, নলহাটির মতো কলেজের ভোট দলের ছাত্র সংগঠনের কাছে একটা বড় পরীক্ষা। এ দিন এবিভিপি-র জেলা সম্পাদক রূপক মণ্ডল দাবি করেন, “পুলিশ-প্রশাসন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে না পারায় আমরা ইলামবাজার, খয়রাশোল, হেতমপুর, বোলপুর কলেজে মনোনয়নপত্র তুলতে পারিনি। তবে, আজ শনিবার রামপুরহাট কলেজ, সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ এবং মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লপসা হেমব্রম কলেজে সংগঠনের ছেলেমেয়েরা মনোনয়নপত্র তুলবেই।” এ ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে এবিভিপি জেলা সম্পাদকপ্রয়োজনীয় সাহায্যের আর্জি রেখেছেন।
এ দিকে, শুক্রবার বোলপুর ও সিউড়ি মহকুমায় কলেজগুলিতে মনোনয়নপত্র তোলার ক্ষেত্রে তেমন নজরে পড়েনি এসএফআই। তবে, রামপুরহাট মহকুমার কলেজগুলিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ওই বাম ছাত্র সংগঠন। এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে হাজির ডিওয়াইএফ-এর রামপুরহাট শহর লোকাল সম্পাদক অমিতাভ সিংহ বলেন, “গত বার শাসক দলের বাধায় বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি রামপুরহাট কলেজে মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি। এ বারে যাতে সবাই মনোনয়নপত্র তুলতে পারে, তার জন্য আমরা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে মনোনয়নপত্র তোলার দিন থেকে তা জমার দিন এবং ভোটের দিন কলেজ চত্বরে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন জানিয়েছি। পাশাপাশি নির্বাচনের দিন মহকুমাশাসককে কলেজে উপস্থিত থাকার অনুরোধও করা হয়েছে।”
অন্য দিকে, গত বছর অবধি টিএমসিপি-র সঙ্গে জোট করে রামপুরহাট কলেজের ছাত্র সংসদ চালালেও এ বার পৃথক ভাবে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্র পরিষদ। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রবিউল হাসান বলেন, “আমরা একাই লড়ব। রামপুরহাট, মল্লারপুর, নলহাটি, মুরারই-সহ ছ’সাতটি কলেজে ছাত্র পরিষদ লড়াইয়ে থাকবে।”