বোলপুরে কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন অসিত মাল কান পাতলেই এমনটাই শোনা যাচ্ছিল কয়েক দিন ধরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তপনকুমার সাহার নাম ঘোষণা করা হয়। স্বাভাবিক ভাবে গত বারের প্রার্থী এবং ৬ বারের বিধায়ক অসিতবাবু বাদ পড়ায় দলের অন্দরেই উঠছে নানা রকম প্রশ্ন।
কারণ, জেলার রাজনীতিতে দল বদলের বিশেষ করে বামফ্রন্ট ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার একটা হিড়িক পড়েছিল। কংগ্রেসেরও বহু নেতাকর্মী ওই দল বদলে গা ভাসিয়েছেন। তাই গত কয়েক মাস ধরেই শোনা যাচ্ছিল অসিতবাবু তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। তা ছাড়া, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ভেঙে যাওয়ার পরেও রাজ্য সরকারের অধীনস্ত খাদি ও ক্ষুদ্র শিল্প পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন অসিতবাবু। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষুদ্র ও হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তিনি সেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন। যার ফল হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কি বাদ পড়লেন? না কি অন্য কোনও কারণ আছে?
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর কেন্দ্রে অসিতবাবু কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট প্রার্থী হিসেবে সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের কাছে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৮২ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। তার পরে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন ময়ূরেশ্বর, বোলপুর, লাভপুর, নানুর এবং বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম এই ৭টি কেন্দ্রের মধ্যে শুধুমাত্র আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল। বাকিগুলিতে জোট হিসেবে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছিল। তৃণমূল ৪টি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল। আউশগ্রাম কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী পরাজিত হয়েছিলেন। অসিত মাল তাঁর নিজের কেন্দ্র বীরভূম জেলার হাঁসনে জোটপ্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস নানুর বিধানসভা কেন্দ্রে কেবলমাত্র একটি আসনে প্রার্থী দিতে পারলেও বোলপুর, লাভপুর কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে পারেনি। বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতেও কংগ্রেস তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তা হলে কি ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য কি অসিত মাল এ বার ভোটে প্রার্থী হতে চাননি? এ প্রসঙ্গে অসিতবাবুর কাছের কংগ্রেস নেতা হিসেবে পরিচিত খন্দেকর মহম্মদ সফির কথায়, “এই লোকসভা কেন্দ্রে দুর্বল সংগঠনের জন্য সেখানে অসিতদাকে এ বার প্রার্থী না হতে আমরাই বারণ করেছিলাম। তবে যতদূর জানি অসিতদা বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। সেখানে দল চায়নি।”
এই নেতার কথা যদি ধরা যায়, তা হলে কি অসিতবাবু কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার? প্রায় আড়াই বছর আগে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পদে ছিলেন অসিত মাল। বর্তমানে ওই পদে রয়েছে বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। সভাপতির পদ থেকে সরানোর পরে জিম্মির সঙ্গে অসিতবাবুর একটা মত পার্থক্য দেখা দিয়েছে এবং এখনও তাঁদের মধ্যে সমস্যা আছে বলে দল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে জেলা কংগ্রেসের কয়েকজন নেতার কথায়, “বোলপুর কেন্দ্রে অসিত মাল প্রার্থী হলে জেলার সর্বত্র প্রচারে তাঁকে প্রচারে পাওয়া যেত না। সে জন্য এ বার তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি।” যাই হোক নাম ঘোষণার পরে অসিতবাবুর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, “মানস ভুঁইয়া’র নাম কি ঘোষিত হয়েছে।” নাম না ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দল যাকে ভাল বুঝেছে তাঁকে প্রার্থী করেছে। দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে আমি কাজ করে যাব।” তবে হঠাৎ করে তপনবাবুর নাম ঘোষিত হওয়ায় জেলা কংগ্রেসের অনেক শীর্ষ নেতৃত্ব অবাক হয়েছেন। অনেকেই বলছেন, “তপনবাবু পুরপ্রধান থাকাকালীন ২০১০ সালের পুরভোটে হেরেছিলেন। কংগ্রেস ৮ এবং তৃণমূল ৯ ছিল। পরে কংগ্রেসের অনেক কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলে বোর্ড তৃণমূল দখল করে নেয়।” জেলা সভাপতি তথা প্রার্থী জিম্মি বলেন, “তপনকুমার সাহা ভাল লোক। তাঁর নাম প্রদেশে পাঠানো হয়েছিল। তাঁকে প্রার্থী করায় আমি খুশি। এর বেশি কিছু বলব না।”