বাজারের অধিকাংশ দোকানেই ছিল তালা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
দলনেত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ, বনধের রাজনীতি করা চলবে না। তাই বনধের বিরোধিতায় পথে নামল তৃণমূল। যদিও বনধ রুখতে ব্যর্থই হল তারা।
কলেজ ভোটের মনোনয়নকে ঘিরে শাসকদলের ‘সন্ত্রাস’-র বিরুদ্ধে ডাকা বন্ধ সোমবার সফল হল বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে। গত শুক্রবার গঙ্গাজলঘাটির গোবিন্দপ্রসাদ মহাবিদ্যালয়ে মনোনয়নপত্র তোলার দিনে ব্যাপক গণ্ডগোল বাধে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এবিভিপি-র ছাত্রদের মারধর করে মনোনয়নপত্র তুলতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার প্রতিবাদেই এ দিন গঙ্গাজলঘাটি ব্লক সদরে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়েছিল। এবং তাতে সাড়াও মিলেছে।
দিনের শেষে কিন্তু ওই বন্ধ ডাকল ঠিক কারা, তা নিয়ে ধোঁয়াশাই থেকে গেল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এবং এলাকার বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এই বন্ধ অরাজনৈতিক। কলেজ ভোটে তৃণমূলের লাগাতার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আম জনতাই বন্ধ ডেকেছে। অন্য দিকে তৃণমূলের দাবি, বিজেপি এবং অন্য বিরোধী দলগুলি মিলিত হয়ে এই বন্ধ ডেকেছিল। কিন্তু ঘটনা হল, বন্ধ যারাই ডাকুক না কেন, এ দিন গঙ্গাজলঘাটি বাজারে তার প্রভাব দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তৃণমূলের। মুখে অবশ্য গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী বলেছেন, “সরকারি অফিস, স্কুল খোলা ছিল। দোকানপাটও তেমন বন্ধ ছিল না। এ আবার কেমন বন্ধ?”
এ দিন গঙ্গাজলঘাটি বাজারে গিয়ে কিন্তু দেখা গেল ছবিটা আলাদা। অধিকাংশ দোকানপাটই বন্ধ, সব্জি বাজারে হাতে গোনা দু’এক জন বিক্রেতা পসরা সাজিয়ে বসে। ক্রেতাদের ভিড় নেই। কয়েকটি বন্ধ দোকানের দাওয়ায় লাঠি হাতে কিছু পুলিশকর্মী বসে। বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় কিছু যাত্রী দাঁড়িয়ে। এ ছাড়া রাস্তাঘাটে তেমন একটা ভিড় নেই। বন্ধের প্রভাব যে ভালই পড়েছে, তা মানছে স্থানীয় পুলিশও। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিকেল থেকে এই বন্ধের সমর্থনে এলাকার কিছু লোক বিভিন্ন দোকানে যান। বন্ধ ডাকা হয়েছে খবর পাওয়ার পর থেকেই তৃণমূল তা রুখতে প্রচার চালায়। এ দিন সকালেও শতাধিক তৃণমূল কর্মী বন্ধের বিরোধিতায় মিছিল করেন। কিছু দোকানও খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু মিছিল চলে যাওয়ার পর ফের সেই সব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বনধ সফল হলেও কোনও রাজনৈতিক দলই এর দায় নিতে নারাজ। বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটকের দাবি, “সাধারণ মানুষ তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই বন্ধ ডেকেছিলেন। আমাদের এতে সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এই বন্ধ আমরা ডাকিনি।” স্থানীয় বাসিন্দারের একাংশও বিজেপি-র কথায় সায় দিচ্ছেন। এ দিনের বন্ধের সমর্থনে কোনও রাজনৈতিক দলকেই দেওয়াল লিখন বা পোস্টার সাঁটাতে দেখা যায়নি। বন্ধের সমর্থনে বিরোধী দলের নেতাদের রাস্তায় নামতেও দেখা যায়নি। গঙ্গাজলঘাটির আশীর্বাদ মার্কেটের বাসিন্দা ও প্রাক্তন সেনাকর্মী নির্মল সিংহ নিজেকে বন্ধের অন্যতম সমর্থক দাবি করে বলেন, “গঙ্গাজলঘাটির সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরাই এই বন্ধ ডেকেছি। তৃণমূলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদেই এই বন্ধ।” বন্ধ সমর্থনকারীদের অভিযোগ, গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, তৃণমূলের জিতেন গরাই নিজে মনোনয়নপত্র তোলার দিন কলেজে দলবল নিয়ে গিয়ে এবিভিপি-র ছেলেদের মারধর করেছেন। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই ঘটনার প্রতিবাদেই ডাকা বন্ধের সমর্থনে রবিবার বিকেলে গঙ্গাজলঘাটি বাজারে পায়ে হেঁটে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রচার চালান বন্ধের সমর্থকেরা। মূলত এলাকার দোকান বন্ধ রাখাই ছিল বন্ধের উদ্দেশ্য।
স্থানীয় বাসিন্দা সুখময় মাজি, প্রসাধনী দ্রব্যের বিক্রেতা তথা গঙ্গাজলঘাটি ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য অরুণ দত্তমোদক বলেন, “এলাকায় তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। তার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ বন্ধ ডেকেছিলেন। তাই আমরা দোকান বন্ধ রেখেছিলাম।”
সম্প্রতি গঙ্গাজলঘাটি ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। ব্লক সভাপতি প্রদীপবাবুকে পদ থেকে সরানোর দাবিতে পথে নেমেছেন ব্লকেরই লটিয়াবনি অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি নিমাই মাজি। এলাকারই কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন, বিজেপি-র পাশাপাশি শাসক দলের একটি অংশও এ দিনের বন্ধকে সমর্থন করেছে। আর তার জেরেই বন্ধ রুখতে ব্যর্থ হয়েছে শাসকদল। প্রদীপবাবুর অবশ্য দাবি, “এলাকাবাসীরা এই বন্ধ ডাকেননি। বিজেপি-সহ সব ক’টি বিরোধী দল একযোগে বনধ ডেকেছিল।”