লাল ফিতে দিয়ে ঘেরা ঘটনাস্থল। —নিজস্ব চিত্র
লোকসভা নির্বাচনের মুখে রহস্যজনক ভাবে খুন হলেন বুথ স্তরের এক তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে ইলামবাজার থানার মুরগাবনি এলাকায়। মনিরুদ্দিন মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি নানাসোল পঞ্চায়তের জয়পুর গ্রামে। পরিবারের তরফ থেকে এ দিন রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ হয়নি। তবে রাজনৈতিক না অন্য কোনও কারণে এই খুন, ধন্দে পুলিশ থেকে শুরু করে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগিয়েছে, জয়পুরের বাসিন্দা মনিরুদ্দিন মণ্ডল ওরফে বুলু নিজের চাষবাসের কাজ ছাড়াও গরুর ব্যবসা করতেন। নিহতের পরিবারের দাবি, বোলপুর বাজারের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ নিজের মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন নিহত ওই কর্মী। পড়শি আব্বাসউদ্দিন মোল্লা বলেন, “পৌনে ৯টা নাগাদ স্থানীয় তৃণমূলের সদস্য তথা বন্ধু শেখ আজিজুলের ফোনে মনিরুদ্দিনের ফোন আসে। মনিরুদ্দিন বলেন, ‘আমাকে দু’জন কিছু খাইয়ে দিয়েছে। আমাকে বাঁচান। আমি মুরগাবনির কাছে পড়ে আছি।’ এই খবর পেয়ে নিহতের বাড়ির লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা মুরগাবনির কাছে যান।” সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা গিয়ে দেখেন, বোলপুর-ইলামাবাজার সড়কের ধারে, চৌপাহাড়ি জঙ্গল লাগোয়া মুরগাবনি এলাকায় তাঁর নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। ডান হাতে ছিল মোবাইল ফোন। অদূরেই দাঁড় করানো ছিল তাঁর মোটরবাইক। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান ইলামবাজার ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম বলেন, “মনিরুদ্দিন মণ্ডল আমাদের বুথ স্তরের দক্ষকর্মী ছিলেন। সুপরিকল্পিত ভাবেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। তবে এই খুনের পিছনে কী কারণ, তা স্পষ্ট নয়। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।”
নিহতের দাদা গোলাম মহিউদ্দিন মণ্ডল বলেন, “ভাই বোলপুর বাজারে যাচ্ছি বলে চা খেয়ে বাড়ি বেরিয়েছিল। সঙ্গে পঞ্চাশ হাজার মতো টাকা ছিল। ওই টাকায় বাড়ি তৈরির জন্য টাইলস কেনার কথা ছিল। পরে শুনি এই কাণ্ড।” প্রসঙ্গত, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের একটি আসন ছাড়া বাকি সব ক’টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এই অবস্থায় ফের ভোটের মুখে রাজ্যে শাসকদলের কর্মী খুনের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। নিছক টাকা হাতানোর জন্য এই খুন, না কি অন্য কোনও রহস্য রয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেহটি ময়না তদন্তের জন্য বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ মণ্ডল বলেন, “কী উদ্দেশ্যে এবং কেমন করে এই ঘটনা ঘটেছে, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।”