অপেক্ষাই সার। এলেন না বাকি তৃণমূল সদস্যেরা।—নিজস্ব চিত্র।
বিক্ষুদ্ধদের ডাকা অনাস্থা সভা ভেস্তে দিয়ে আড়রা পঞ্চায়েত ধরে রেখেছিল ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বার সেই একই কৌশলে চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতে অনাস্থা রুখে দিয়ে ক্ষমতা বজায় রাখল তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। দলের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে মঙ্গলবার ওই সংক্রান্ত সভায় গরহাজির থাকলেন তৃণমূলেরই দুই সদস্য। ফলে সভার জন্য কোরাম গঠন না হওয়ায় অনাস্থা খারিজ হয়ে গেল রঘুনাথপুর ১ ব্লকের চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতে। বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতে আসা অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ডাকা আলোচনা সভায় পঞ্চায়েতে ১১ জন সদস্যের মধ্যে পাঁচ জন উপস্থিত থাকায় কোরাম গঠন সম্ভব হয়নি। তাই অনাস্থা খারিজ হয়ে গিয়েছে।”
রঘুনাথপুর ১ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পরপর অনাস্থা এসেছে তৃণমূল পরিচালিত তিনটি পঞ্চায়েতে। অগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে প্রথমে অনাস্থা আসে বেড়ো পঞ্চায়েতে। পরের দিনই অনাস্থা আসে আড়রা পঞ্চায়েতে। প্রসঙ্গত এই দু’টি পঞ্চায়েত পরিচালনা করে দলের ব্লক নেতৃত্বের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। তাই ওই দুই পঞ্চায়েতে অনাস্থা আসার পরেই পাল্টা হিসাবে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর পরিচালনাধীন চোরপাহাড়িতে অনাস্থা এনেছিল ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই সিপিএমের সদস্যদের সমর্থন নিয়ে তৃণমূলের সদস্যদের একাংশ অনাস্থা এনেছিল।.
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতের ১১ জন সদস্যের মধ্যে সিপিএমের ৩ ও তৃণমূলের ৮ জন রয়েছেন। সিপিএমের সদস্যদের নিয়ে তৃণমূলের ৪ জন সদস্য অনাস্থা এনেছিল প্রধান নূপুর মাহাতোর বিরুদ্ধে। তবে এ দিন সিপিএমের ৩ জন এবং তৃণমূলের দু’জন অনাস্থা সভায় উপস্থিত থাকলেও অনাস্থা আনা তৃণমূলের বাকি দু’জন আসেননি। অনুপস্থিত ছিলেন প্রধান-সহ বাকি ছ’জন তৃণমূল সদস্যও।
অনাস্থা ডেকেও বৈঠকের দিন ওই দুই তৃণমূল সদস্যের অনুপস্থিতি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। দল সূত্রে খবর, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা বলে পরিচিত হাজারি বাউরির অনুগামীরা পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছেন। ব্লকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী প্রদীপ মাজির অনুগামী বলে পরিচিত পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত পাণ্ডের উদ্যোগেই চোরপাহাড়িতে অনাস্থা এসেছিল। এ দিন দুই দলীয় সদস্যের অনুপস্থিতি নিয়ে হাজারিবাবু বলেন, “দলেরই একাংশের প্ররোচনায় পড়ে আমাদের কিছু সদস্য দলের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন। কিন্তু ওঁরা পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এ দিন সভায় যাননি।” তবে সুশান্তবাবুর অভিযোগ, “হাজারিবাবুরা জোর করে ভয় দেখিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে থাকা আমাদের দুই সদস্যকে সভায় আসতে দেননি।” অভিযোগ উড়িয়ে হাজারিবাবুর মন্তব্য, “আমরা ক্ষমতা দেখালে এ দিন কোন সদস্যই অনাস্থার সভায় যেতে পারতেন না।”
তবে ঘটনা যাই হোক না কেন, পঞ্চায়েতগুলিতে অনাস্থার খেলায় আখেরে কিন্তু ক্ষতি হল ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীরই। বেড়ো পঞ্চায়েতে অনাস্থায় অপসারিত হতে হয়েছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর প্রধানকে.আর চোরপাহাড়িতে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতার দখল বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে।