অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনার সমস্ত পত্রপত্রিকা (জার্নাল) চাইলে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পড়তে পারবেন। এই খবর দিয়ে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের সমস্ত জার্নাল সবাই পড়তে পারেননা। কিছু জার্নালের কপিরাইট রয়েছে। আমরা উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে অনলাইন জার্নাল অ্যাকসেস-এর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে সম্মতি মিলেছে।” তিনি জানান, এ বার থেকে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ইন্টানেটেই সহজেই ওই বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থার নানা বিষয়ের লেখা পড়তে পারবেন। তাতে জ্ঞানের ভাণ্ডারও বাড়বে। শুধু জ্ঞানের পিপাসা বাড়ানোই নয়, ছাত্রছাত্রীদের ভাল ফলাফলে উত্সাহ দিতে সোনার পদক দেওয়াও চালু করল সদ্য চালু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা পড়ুয়াকে স্বর্ণ পদক দেওয়া হবে।
তবে এই জেলার পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার পথে বড় সমস্যা আর্থিক সঙ্কট। সে বিষয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সমস্যা এড়াতে ইতিমধ্যেই একটি ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাঁরা আলোচনাও অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। উপাচার্য জানান, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা বই কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ করার আশ্বাস দিয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলিং-এর বৈঠকে কোন কোন পড়ুয়া এই সাহায্য পেতে পারবেন তা ঠিক করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই পানীয় জল পরিশ্রুত করার দু’টি মেশিন ওই ব্যাঙ্ক বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে। আপাতত ৩৩ জন পড়ুয়াকে ‘বুক গ্রান্ট’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাঙ্ক। ওই ব্যাঙ্কের বাঁকুড়ার সিনিয়র ম্যানেজার বিনোদ শর্মা বলেন, “সামাজিক কাজ হিসেবে কিছু প্রকল্প আমরা নিতে পারি। সেই প্রকল্পেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃস্থ পড়ুয়াদের জন্য বুক গ্রান্ট দেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করলেই পড়ুয়াদের সাহায্য করা হবে।”
বাঁকুড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরে ছিল। বামফ্রন্ট আমলে এ নিয়ে এগোলেও বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছিল পুরুলিয়া। বাঁকুড়া তখন পায়নি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খাতড়ার একটি সভায় এই জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা ঘোষণা করেন। জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী নিজে এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন। বেশ কয়েক বিঘা জমিও দান করেন তিনি। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার এক বছরের মধ্যেই চলতি বছরের অগস্ট মাস থেকে বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, সাঁওতালি, ট্রাইবাল স্টাডিজ, সমাজকর্ম, ইতিহাস, দর্শন, শিক্ষাবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন ও গণিত-সহ মোট ১১টি বিষয়ে পঠনপাঠন শুরু হয় বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মোট ৫১ জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। উপাচার্য নিজেও নিয়মিত পড়ুয়াদের ক্লাসে গিয়ে তাঁদের সুবিধা অসুবিধার কথা জানতে চাইছেন। বাঁকুড়ার মিথিলা ও তিলাবেদিয়া মৌজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে প্রায় ১৫ বিঘা জমি এসেছে। সেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যার মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাতে পেয়েছে। সেই টাকাতেই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কাজ শুরু হয়েছে।
আপাতত বাঁকুড়া ১ ব্লকের পোয়াবাগান এলাকায় আড়াইতলা সরকারি ভবনে অস্থায়ী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে জেলার ছাত্রছাত্রীরাও খুশি। এতদিন উচ্চশিক্ষার জন্য কাছে পিঠে বর্ধমান বা মেদিনীপুরে ছুটতে হতো এই জেলার পড়ুয়াদের। এ বার সেই দিন ফুরলো বলেই জানাচ্ছে জেলার শিক্ষক মহল। এ দিকে শুরুর বছরেই ভাল সাড়া পেয়েছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১১টি বিষয়ে প্রায় ৪৫০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেবনারায়ণবাবু। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়কে সব রকম সাহায্য করছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে দ্রুত প্রথম সারিতে উঠে আসার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।”