এই ঘরেই মেলে রণবীর মিত্র (ইনসেটে)-এর দেহ। ছবি: সুজিত মাহাতো
বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হল পুলিশ সুপারের অফিসের করণিকের গুলিবিদ্ধ দেহ। বৃহস্পতিবার ভোরে পুরুলিয়া শহরের ভাটবাঁধ এলাকার ঘটনা। মৃতের নাম রণবীর মিত্র (২৮)। ঘটনায় বেশ কিছু ‘খটকা’ দেখা দিয়েছে তদন্তকারীদের। যাতে রহস্য আরও দানা বেঁধেছে। জেলা পুলিশ সুপার সেলভা মুরুগান বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। তবে তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।’’
রণবীরের বাবা রবিলোচন মিত্র ছিলেন বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার আইসি। ২০১০ সালে সোনারডাঙা এলাকায় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে গুলিতে নিহত হন তিনি। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কর্মরত অবস্থায় অকালে রবিলোচনবাবুর মৃত্যুর পরে, তাঁর স্ত্রী সরকারি চাকরি নেননি। ছেলে সাবালক হলে চাকরি পাবে বলে ঠিক হয়। সেই সূত্রেই রণবীর পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের অফিসে করণিকের চাকরি পান। কয়েকবছর আগে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ন’বছর আগে বিয়ে করেন রণবীর। ওই দম্পতির চার বছরের মেয়ে রয়েছে। পুরুলিয়া শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাটবাঁধের খেজুরেবাঁধ এলাকায় তাঁদের দোতলা পাকা বাড়ি। দোতলায় মেয়েকে নিয়ে থাকতেন রণবীরের স্ত্রী কুমকুম। এক তলায় এক ঘরে ভাড়াটে রয়েছেন। অন্য ঘরে থাকতেন রণবীর। কুমকুমের দাবি, ওই ঘরের চাবি শুধু রণবীরের কাছেই থাকত।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মদ নিয়ে রণবীর বাড়ি ফিরেছিলেন বলে দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী। কুমকুম বলেন, ‘‘মদ খেল। ভাড়াটে দাদা ছিলেন। আমি ছিলাম। তখন সব স্বাভাবিক ছিল। ১২টার সময়ে আমরা যে যার ঘরে চলে যাই।’’ তাঁর দাবি, বারণ করা সত্ত্বেও মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন রণবীর। কুমকুম বলেন, ‘‘একটি মেয়ের সঙ্গে ইদানীং ওর ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। চলে আসার সময়ে দেখেছিলাম, তার সঙ্গেই ফোনে কথা বলছিল।’’ পুলিশের কাছে কুমকুম দাবি করেছেন, রাত ২টো নাগাদ তিনি একতলা থেকে শব্দ পেয়ে ছুটে যান। দেখেন দরজা বন্ধ।
সকালে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায়, বিছানায় পড়ে রয়েছে রণবীরের রক্তাক্ত দেহ। বিছানাতেই পড়ে রয়েছে একটি বিদেশি পিস্তল। তদন্তকারীদের অনুমান, খুব কাছ থেকে ডান কানের উপরে গুলি করা হয়েছিল। উল্টো দিকের জানলার ভাঙা কাচ দেখে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া গুলির আঘাতেই তা হয়েছে।
ওই অস্ত্র রণবীরের কাছে কোথা থেকে এল, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। কুমকুমের দাবি, তাঁর স্বামীর কাছে পিস্তল রয়েছে সে কথা তিনি টাউন থানায় জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তা অস্বীকার করেছে পুলিশ। ওই পিস্তলের লাইসেন্স রণবীরের ছিল কি না, তা-ও তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেহ যে ঘরে ছিল, চাবি থাকলে সেটির দরজা দু’দিক থেকে খোলা যায়। তা ছাড়া, গভীর রাতে ঘটনা ঘটলেও পুলিশে খবর যায় প্রায় সকাল ৮টায়। এতটা দেরি হল কেন, সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। এ দিন ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে এসেছিলেন রণবীরের মাসতুতো দিদি প্রিয়াঙ্কা মাঝি। তিনি বলেন, ‘‘মাঝেমাঝেই ওর সঙ্গে কথা হত। এমন একটা ঘটনা কী করে ঘটল, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’