কাঁটা তুলতে প্রেমিকার স্বামীকে খুন

স্ত্রী-র সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন স্বামী। অভিযোগ, তার জেরেই স্ত্রীর সেই প্রেমিকের হাতে খুন হতে হল স্বামীকে। নৃশংস ভাবে খুন করা হল দুবরাজপুরের ঘাসবেড়ার বাসিন্দা মঙ্গল হেমব্রমকে (৪৫)। শনিবার রাত পৌনে বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:০৩
Share:

মঙ্গলের বাড়িতে তদন্তে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

স্ত্রী-র সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন স্বামী। অভিযোগ, তার জেরেই স্ত্রীর সেই প্রেমিকের হাতে খুন হতে হল স্বামীকে। নৃশংস ভাবে খুন করা হল দুবরাজপুরের ঘাসবেড়ার বাসিন্দা মঙ্গল হেমব্রমকে (৪৫)। শনিবার রাত পৌনে বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। খুনে অভিযুক্ত ওই গ্রামে বাসিন্দা ঈশ্বর টুডুকে অবশ্য রবিবারও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের মা সুখদি হেমব্রম। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘খুনের যড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী কুহুলি হেমব্রমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

Advertisement

মৃতের পরিবারের দাবি, বেশ কয়েক বছর ধরেই বছর পঁয়ত্রিশের বধূ কুহুলির সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে ঘাসবেড়ার ঈশ্বর টুডুর। মঙ্গল ও কুহুলির তিন সন্তান। ইতিমধ্যেই তাঁর বড়মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, পেশায় লরি ও ডাম্পার চালক ঈশ্বরেরও পরিবার রয়েছে। তাঁর প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সে ফের বিয়ে করছে। তাঁর প্রথম পক্ষের দু’টি ও দ্বিতীয় পক্ষের দু’টি সন্তান রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিজের ভরা সংসার থাকা সত্ত্বেও কুহুলির সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই চলেছিল ঈশ্বর। মাঝে মাস তিনেক কূহুলিকে নিয়ে সে পালিয়ে গিয়েছিল। এই নিয়ে দু’টি পরিবারে বিস্তর জলঘোলা হয়। সমস্যা মেটাতে এগিয়ে আসে পাড়া-পড়শিরা। শেষ পর্যন্ত. মাস খানেক আগেই ফের স্বামী মঙ্গলের কাছে ফিরে আসেন কুহুলি। কুহুলিকে মেনে নিলেও তাঁকে কিছুটা নজরে-নজরে রাখছিলেন মঙ্গল। ‘‘সেটাই কাল হল’’, বলছেন মঙ্গলের মা সুখদি বোন, মুনি হেমব্রমেরা।

ঠিক কী ঘটেছিল শনিবার রাতে?

Advertisement

সুখদি বলছেন, ‘‘কুঁড়ে ঘরে জল চুঁইয়ে পড়ে। তাই নাতি-নাতনিরা পড়শির বাড়িতে রাতে শুতে গিয়েছিল। ঘরে ছেলে-বৌ শুয়ে ছিল। রাত প্রায় ১২টায় ছেলের চিৎকার শুনতে পাই। ‘মা আমাকে বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিল ছেলে। আমি ছোট ছেলে রবীন ও ওর স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। সবাই গিয়ে দেখি ছেলের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত ঝরছে। সে কাতরাচ্ছিল। ঘরময় রক্ত। আমাদের চোখের সামনেই ছেলেটার ছটফটানি থেমে গেল।’’ তাঁর অভিযোগ, সে সময়ে সামনেই দাঁড়িয়েছিল কুহুলি। সেই জানায়, ঈশ্বর এসে মঙ্গলকে মেরে ফেলেছে। সুখদির আক্ষেপ, ‘‘ওই বৌযের জন্যেই ছেলেটা শেষ হয়ে গেল।’’

একই অভিযোগ মঙ্গলের বোন মুনি হেমব্রমেরও। মুনিদেবী বিয়ে হয়েছে ওই পাড়াতেই। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাতে খবর পেয়ে এসে দেখি সব শেষ। অথচ বৌদিকে বহুবার বুঝিয়েছি সংসার সুখে রাখতে অন্যদিকে মন দিও না। কিন্তু লাভ হয়নি।’’

খবর পেয়ে ভোরেই গ্রামে পুলিশ আসে। প্রাথমিক তদন্তের পর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা তখন ঈশ্বরের উপর ফুঁসছিলেন। পুলিশ তাঁদের বোঝান আইন হাতে না নিয়ে তার খবর পুলিশকে জানাতে। নিহতের স্ত্রীর মুখে অবস্থা কথা নেই। কী হয়েছিল, জিজ্ঞাসা করতে একটাই কথা তিনি বলেছেন, ‘‘খুন করেছে ঈশ্বরই।’’ যদিও পুলিশের দাবি, জেরায় তাদের কাছে ওই মহিলা জানিয়েছেন, স্বামীর নজরদারি তাঁর আর সহ্য হচ্ছিল না। তাই তিনিই ঈশ্বরকে ডেকে এনে মঙ্গলকে খুন করিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement