পায়ে-পায়ে। হিড়বাঁধে পুলিশের উদ্যোগে খেলা।—নিজস্ব চিত্র।
ওদের প্রত্যেকের বয়স আঠারোর নীচে। অধিকাংশই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির এই পড়ুয়ারাই পড়াশোনার ফাঁকে গ্রামের মাঠে খেলাধুলো করে আসছে। রবিবার হিড়বাঁধে সেই মেয়েদের ফুটবল শাসন করতে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন দর্শকরা।
গত কয়েক বছর ধরেই বিশেষত জঙ্গলমহলের ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট করে আসছে পুলিশ। তাতে ছেলেরা তো বটেই বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিমাসেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় মেয়েদের নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট করাচ্ছে বিভিন্ন ক্লাব ও প্রতিষ্ঠান। রবিবার পুলিশের উদ্যোগেই একদিনের মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়ে গেল হিড়বাঁধে। স্থানীয় ব্লক অফিস সংলগ্ন মাঠে খেলাগুলি হয়। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় উগানপাথর জিওর ঝর্না মহিলা ফুটবল দল। ফাইনালে তারা মশানঝাড় আদিবাসী কিশলয় ক্লাবকে ২-০ গোলে হারায়। এই প্রতিযোগিতায় এলাকার ছ’টি মহিলা ফুটবল দল যোগ দিয়েছিল। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন উগানপাথর জিওর ঝর্না দলের অনিমা হাঁসদা। প্রতিযোগিতার সেরা নির্বাচিত হন ওই দলেরই বর্ণালী হাঁসদা।
হিড়বাঁধ থানার ওসি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেন, “এলাকার মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর লক্ষেই প্রতি মাসে ফুটবল, ক্রিকেট, দৌড়-সহ বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এলাকার কমবয়সী মেয়েরা ফুটবলে ভীষণ পারদর্শী। খেলাধুলোয় ওরা ভাল সাড়া ফেলেছে। ওদের খেলাধুলোয় উৎসাহ দেওয়ার জন্যই মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।’’
স্কুলের মাঠে, গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলা এইসব মেয়েদের অধিকাংশের বাড়ির আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া উগানপাথরের বর্ণালী হাঁসদা যেমন বলল, “খেলাটা আমার কাছে নেশার মতো। তাই খেলা থেকে কী পেলাম তার সাতপাঁচ না ভেবে খেলছি। তবে একটু সহযোগিতা পেলে আরও ভাল খেলতে পারব।” মশানঝাড়ের রাইমনি সোরেন, উগানপাথরের অনিমা হাঁসদারা বলে, “বুট, জার্সি কেনার পয়সা নেই। তবু মনের আনন্দে আমরা বিকেলের দিকে গ্রামের মাঠে কিংবা স্কুলের মাঠে খেলি। প্রশিক্ষক পেলে আমরা আরও ভাল খেলতে পারব বলে আশা করছি।’’ ফাইনাল খেলা শেষে জয়ী এবং রানার্স টিমকে ট্রফি দেন খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহরায়। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স টিম, প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় এবং ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়কে নগদ টাকাও পুরস্কার দেওয়া হয়।