প্রতীকী ছবি
নাবালকদের হাতে থাকা সম্পত্তিও জাল দলিল তৈরি করে বিক্রি হয়ে যাওয়ার ঘটনা জেলা প্রশাসনের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে। আইন বলছে, আদালতের নির্দেশ ছাড়া নাবালকের নামে থাকা জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায় না। পাশাপাশি, পাট্টা পাওয়া জমিও বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায় না। কেবল উত্তরাধিকারী হওয়া যায়। কিন্তু সেই আইন মানছে কে?
কয়েকটি উদাহরণেই স্পষ্ট হবে।
সিউড়ি ২ ব্লকের বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের তাহালা গ্রামের এক নাবালকের নামে থাকা জমি মাস কয়েক আগে বেমালুম কিনে তাঁর নিজের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নিয়েছেন মহম্মদবাজারের বাসিন্দা এক মহিলা। প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে মাড়গ্রামে। দুই নাবালিকার জমি কিনে নিয়েছেন ওই এলাকার এক মহিলা। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবি, দু’টি ক্ষেত্রেই বেআইনি ভাবে নাবালক নাবালিকাদের জমি বিক্রি করছেন তাদের মা। যেটা করা যায় না। মিউটেশনের সময় দলিলে নাবালকদের নামে সম্পত্তি দেখে সন্দেহ হওয়ায় খোঁজখবর নিতেই বেরিয়ে আসে আসল তথ্য।
কিংবা সদাইপুর থানার লক্ষ্মণডি গ্রামের এক জনের পাট্টা পাওয়া জমি কিনেছেন ওই থানা এলাকারই এক বাসিন্দা। এমন উদাহরণও বহু। কী ভাবে জেলায় এমন আইন-বিরুদ্ধ কারবার চলছে, কেন এত অভিযোগ উঠে আসছে, সেটাই মাথাব্যথার কারণ জেলা প্রশাসনের কাছে।
জমি-জালিয়াতির সংখ্যাবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে মিউটেশন পদ্ধতিতে বদলকে দায়ী করছেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগে মিউটেশনের ক্ষেত্রে, আবেদনকারীকে এই মর্মে হলফনামা দিতে হত যে, জমির দলিল ও দখল তাঁর রয়েছে। সেটা খতিয়ে দেখে মিউটেশন দেওয়া হত। ২০১৮ সালে ‘অটোমেটেড মিউটেশন’ চালু হয়েছে। পদ্ধতিতে বেশ কিছুটা বদল এসেছে। জমির ডেটা ব্যাঙ্ক এখন অনলাইনে মজুত। রায়ত থেকে রায়ত জমি বেচাকেনা হলে, রেজিস্ট্রি দফতরের ডেটাবেসের সঙ্গে ভূমি ও ভূমি সংস্কার সংক্রান্ত ডেটা চলে আসছে।
জমি-জালিয়াতির জন্য আর একটি কারণ হল ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী অপ্রতুলতা। ভূমি-কর্তাদের দাবি, ১৮২৫ জন কর্মী থাকার কথা জেলায়। আছেন মাত্র তার এক চতুর্থাংশ। অথচ গত এক বছরে বীরভূমে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মিউটেশেন হয়েছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘এক চতুর্থাংশ কর্মী দিয়ে প্রতিটি মিউটেশন ‘কেস’ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখা সম্ভব নয়।
ফলে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জালিয়াতি ধরা পড়ছে না। জমির আসল মালিক অভিযোগ জানানোর পরে জালিয়াতি সামনে আসছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সন্দেহ হওয়ায় জালিয়াতি ধরা পড়ছে।’’
অন্য দিকে, ডিরেক্টোরেট অব রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প রেভিনিউ দফতরের কর্তাদের দাবি, ১৯০৮ সালে পাস হওয়া আইন মোতাবেক এখনও তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। তার উপরে তাঁদের উপরে রাজস্ব সংগ্রেহর লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চাপ রয়েছে। ফলে, সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে না অনেক সময়েই।
বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু অবশ্য বলছেন, ‘‘শুধু রাজস্ব আদায়ের চাপে একের জমি অন্যকে দিয়ে দেওয়া হবে, এর মধ্যে কোনও যুক্তি নেই।
জাল দলিল করে অথবা প্রকৃত জমির মালিক বা ক্রেতার বদলে অন্য কেউ ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে এমন অন্যায় করছে
বুঝতে পারলেই তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে। নজর রাখতে হবে পাট্টা, দেবোত্তর এবং নাবালকদের জমি অন্যকে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার বিষয়েও।’’