সাপের কামড়ের পরও বধূ ৪ বছরের শিশুসন্তানকে স্তন্যপান করানোয় অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুও। শিশুটি বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। —প্রতীকী চিত্র।
বিষধর সাপের কামড়ের পরেও ওঝার কথায় ভরসা করে প্রাণ হারাতে হল এক বধূকে। মায়ের স্তন্যপান করে অসুস্থ হয়ে পড়ল শিশুও। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের থানার বালসী ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শালোইপাড়া এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতার নাম শিখা বাগদি (২৮)।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে শালোইপাড়ার ওই বধূ খাওয়ার পর ঘরের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে স্বামী এবং চার বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। গভীর রাতে হাতে প্রবল যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম ভেঙে যায় শিখার। স্বামীকে ঘুম থেকে তুলে জানান বিষয়টি। আলো জ্বেলে দেখা যায় শিখাকে সাপে কামড়েছে। স্ত্রীকে নিয়ে বিশ্বজিৎ বাগদি ছুটে যান স্থানীয় এক ওঝার কাছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই ওঝা বধূর ক্ষতস্থান দেখে জানান সাপ নয়, তাঁকে কাঁকড়াবিছে কামড়েছে। তাই তেমন গুরুতর কিছু নয়। ওঝার কথায় বিশ্বাস করে স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে চলে যান স্বামী। এর কিছু ক্ষণ পরই স্ত্রীর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে থাকে। তড়িঘড়ি স্ত্রীকে নিয়ে পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান বিশ্বজিৎ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা শিখাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর কিছু ক্ষণ পরেই মেঝেতে বিছানো মাদুরের তলা থেকে উদ্ধার হয় একটি গোখরো সাপ।
অন্য দিকে, সাপের কামড়ের পর ওই বধূর ৪ বছরের শিশুসন্তান স্তন্যপান করায় অসুস্থ হয়ে পড়ে সেও। অসুস্থ ওই শিশু এখন বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃতার স্বামীর কথায়, ‘‘প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি যে স্ত্রীকে সাপে কামড়েছে। হাতে যন্ত্রণা হওয়ায় ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওঝা বলেছিল কাঁকড়াবিছে কামড়েছে। সেটা না হলে আমার স্ত্রীকে সোজা হাসপাতালে নিয়ে যেতাম। তা হলে স্ত্রীর প্রাণটা বেঁচে যেত। শুধুমাত্র ওঝার কথায় বিশ্বাস করেই আমাদের এত বড় বিপদ ঘটল।’’
এই ঘটনায় ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌমাই সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে সাপে কামড়ানো বধূকে পরিবারের লোকজন দ্রুত যে কোনও হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু তা না করে পরিবারের লোকজন ওঝার উপর ভরসা করেছেন। তাতে প্রাণ হারালেন এক জন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভারতীয় আইন অনুযায়ী তন্ত্রমন্ত্র, তাবিজ ইত্যাদি দ্বারা চিকিৎসা করা বা চিকিৎসার দাবি করা বেআইনি। ওই ওঝার বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’