স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল বলেন,‘‘ওই মহিলাকে আমরা কেউ চিনি না। তিনি কোথা থেকে এসে এই টাওয়ারে চেপে বসেছিলেন, তা-ও জানি না। তবে রাতভর চেষ্টার পর তাঁকে সুস্থ ভাবে নামিয়ে আনা সম্ভব হওয়ায় আমরা খুশি।’’
টাওয়ারে চড়ে মহিলা (বামদিকে)। জাল বিছিয়ে দমকল বাহিনী (ডানদিকে) নিজস্ব চিত্র।
হাইটেনশন বিদ্যুৎবাহী তারের উঁচু টাওয়ারের উপর চেপে বসে আছেন এক মহিলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের পাশে থাকা খুঁটির এই দৃশ্য চোখে পড়তেই প্রমাদ গুনেছিলেন বাঁকুড়ার মেজিয়া থানার সীতারামপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পুলিশে। এর পর একে একে হাজির হন পুলিশ, দমকল, সিভিল ডিফেন্স ও ডিভিসি-র কর্মীরা। চার দফতরের কর্মীদের রাতভর চেষ্টায় শুক্রবার ভোরে সেই মহিলাকে নামিয়ে আনা সম্ভব হল। নির্বিকার মহিলা নেমে এলেন রীতিমত বহাল তবিয়তেই। টাওয়ার থেকে নামতেই ওই মহিলাকে আটক করে মেজিয়া থানার পুলিশ।
মেজিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎবাহী হাইটেনশন লাইন চলে গেছে মেজিয়া ব্লকের সীতারামপুর গ্রামের পাশ দিয়ে। স্থানীয় সূত্রে খবর ওই হাইটেনশন বিদ্যুৎবাহী টাওয়ারের উপর বৃহস্পতিবার চেপে বসেছিলেন অজ্ঞাতপরিচয় মাঝবয়সি এক মহিলা। তাঁকে কেউ ওই খুঁটিতে উঠতে না দেখলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নজরে আসে গ্রামবাসীদের। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এই আশঙ্কায় দ্রুত খবর দেওয়া হয় মেজিয়া থানায়।
দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মহিলাকে ওই খুঁটি থেকে নেমে আসার জন্য কাকুতি মিনতি করতে শুরু করে পুলিশ। কিন্তু নির্বিকার মহিলা পুলিশের সেই আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় দমকলে খবর দেওয়া হয়। দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছে খুঁটির নীচের অংশে জাল বিছিয়ে মহিলাকে নামিয়ে আনার চেষ্টা কনরে। কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যার্থ হয়। এর পর মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে খবর দিলে ঘটনাস্থলে হাজির হন ডিভিসি-র বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান জেলা প্রশাসনের সিভিল ডিফেন্স কর্মীরাও। এর পর প্রায় দশ ঘণ্টার চেষ্টায় যৌথ ভাবে শুক্রবার ভোরে নিরাপদে ওই মহিলাকে বিদ্যুতের টাওয়ার থেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়। মহিলার পরিচয় জানা না গেলেও তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।
স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল বলেন,‘‘ওই মহিলাকে আমরা কেউ চিনি না। তিনি কোথা থেকে এসে এই টাওয়ারে চেপে বসেছিলেন, তা-ও জানি না। তবে রাতভর চেষ্টার পর তাঁকে সুস্থ ভাবে নামিয়ে আনা সম্ভব হওয়ায় আমরা খুশি।’’
সীতারামপুর গ্রামের অন্য এক বাসিন্দা সিদ্ধার্থ মণ্ডলের কথায়, ‘‘ওই মহিলা আমাদের সকলকে রাতভর নাকানি চোবানি খাইয়েছেন। গোটা গ্রাম ওই টাওয়ারের নীচে রুদ্ধশ্বাস রাত কাটিয়েছে।’’
শুক্রবার ভোরে তাঁকে নামিয়ে আনা হলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘরে ফিরেছেন গ্রামবাসীরা।