স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপর্ণা সহিস।—নিজস্ব চিত্র।
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগের দিনই প্রথম সন্তানের জন্ম দিলেন এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সেই সদ্যোজাতকে পাশে রেখেই বুধবার পরীক্ষায় বসলেন বলরামপুর পতিডি-চণ্ডীতলা শিক্ষা নিকেতনের ছাত্রী অপর্ণা সহিস। আগাগোড়া টেনশন থাকলেও পরীক্ষা দিয়ে অবশ্য স্বস্তির হাসি দেখা গিয়েছে তাঁর মুখে।
প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বলরামপুরের বাঁশগড় গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন অর্পণা। মঙ্গলবার সেখানে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তারপর কী আর পরীক্ষা দেওয়া যাবে? এই দুঃশ্চিন্তা নিয়েই মঙ্গলবার অনেকখানি সময় কেটেছে তাঁর। অপর্ণার মা আদরী সহিসের কথায়, ‘‘মেয়ের পরীক্ষাকেন্দ্র বলরামপুরের রাঙাডি ভজনাশ্রম বিদ্যালয়ে। কিন্তু সন্তান হওয়ার পরে মেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দুর্বল শরীরে তার পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষমতাও নেই। এই অবস্থায় মেয়ে কী করে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেবে, এ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। আমরা স্কুলের শিক্ষকদের সমস্যার কথা জানাই।
অবশেষে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রতিনিধি, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধিকারিকেরা পাশে দাঁড়ানোয়, তিনি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেলেন। দুর্বল শরীরে সন্তানকে দেখাশোনার ফাঁকেই কোনওরকমে প্রশ্নপত্র পেয়ে হাতে পেন নিলেন। যতটা সম্ভব উত্তরও দিলেন তিনি।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দোতলায় একটি ঘরে স্বাস্থ্যকর্মীরাই বছর আঠারোর অপর্ণাকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। মাঝে মধ্যে মেয়ে কেঁদে উঠছিল। তাকে কিছুটা সামলে নিয়ে ফের উত্তরপত্র টেনে লিখতে শুরু করেছেন তিনি। কখনও ঘুমন্ত শিশুর দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। বলরামপুর বাঁশগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার মহেশ্বর মান্ডি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে ওই ছাত্রী সন্তানের জন্ম দেওয়ায় এখনই তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই নেই। কয়েকদিন ওঁকে এখানে নজরে রাখার প্রয়োজন। তাই আমরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই দোতলায় একটি ঘরে ওকে আলাদা পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’’ অপর্ণার এই পরীক্ষা দেওয়ার জেদ দেখে তাজ্জব তাঁর বাড়ির লোকজন, স্বাস্থ্যকর্মীরাও।
পরীক্ষা শেষে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে অপর্ণা বলেন, ‘‘প্রথমে খুব টেনশনে ছিলাম— পরীক্ষাটা দিতে পারব কি না কে জানে। যাক পরীক্ষা দিতে পেরেছি। পরীক্ষাও ভালই হয়েছে।’’ পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সদস্য তথা জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালন সমিতির আহ্বায়ক কামাক্ষ্যাপ্রসাদ ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘সদ্য সন্তানের জন্ম দিয়ে ওই ছাত্রী পরীক্ষা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় আমরা সে ব্যবস্থা করে দিই। সত্যিই ওঁর
জেদ অদম্য।’’