মঙ্গলবার সৃষ্টিধর। নিজস্ব চিত্র।
সরিয়ে নেওয়া হল সৃষ্টিধর মাহাতোর নিরাপত্তারক্ষীদের। সোমবার সকালে সৃষ্টিধরবাবুর দুই নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে তাঁর ছোট ছেলে সুদীপ মাহাতোর নিরাপত্তারক্ষীকেও তুলে নেওয়া হয়েছে।
গত রবিবার পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী একটি জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করতে পুরুলিয়ায় আসেন। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায়ের ওই পুজোর সূচনা অনুষ্ঠানে শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল সৃষ্টিধর মাহাতোকেও। ঠিক তার পরেই পিতা-পুত্রের নিরাপত্তারক্ষীদের তুলে নেওয়ার ঘটনায় জল্পনা বেড়েছে। এ দিকে, নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালকে চিঠি লিখেছেন সৃষ্টিধরবাবু।
পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকের খয়রাডি গ্রামে সৃষ্টিধরবাবুর বাড়ি। সেখানেই থাকেন তিনি। কংগ্রেসে থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের পরে সেখানে যোগ দেন। রাজ্যে পালাবদলের আগে বলরামপুরে দলের সভাপতির দায়িত্ব সামলাতেন তিনিই। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জানান, সে সময়ে মাওবাদীদের ‘টার্গেট’ও হন সৃষ্টিধর। তাঁর বাড়ির দেওয়ালে হুমকি দিয়ে পোস্টারও পড়েছিল। সৃষ্টিধরবাবুর কথায়, ‘‘২০১১-র পুজোর আগে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়। পরে ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরে, জেলা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়।’’
সে বার পঞ্চায়েত ভোটে জিতে তাঁর ছোট ছেলে সুদীপ মাহাতো পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি হন। কিছু দিন পরে সুদীপ বলরামপুর ব্লকে দলের সভাপতি হিসেবেও কাজ শুরু করেন। দু’জন নিরাপত্তারক্ষী পান তিনিও। ২০১৮-য় পঞ্চায়েত ভোটে বলরামপুরে বিজেপির কাছে হেরে যায় তৃণমূল। দলের বিপর্যয়ের পিছনে সভাধিপতির ভাবমূর্তির প্রভাব দলের অন্তর্তদন্তে উঠে আসে। তার পরে থেকে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে সৃষ্টিধরের। নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় দুইয়ে। গত সোমবার তাঁদেরও তুলে নেওয়া হয়েছে। এ দিকে, সুদীপের দুই নিরাপত্তারক্ষীর মধ্যে মাস তিনেক আগে এক জন নিরাপত্তারক্ষীকে তোলা হয়। সোমবার অন্য জনকেও তুলে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর ‘আমরা দাদার অনুগামী’দের তরফে পুরুলিয়ায় বিজয়া সম্মিলনীর সভায় সৃষ্টিধর নাম না করে দলের বর্তমান জেলা নেতৃত্বকে কার্যত তুলোধোনা করেন। নিজেকে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী বলেও উল্লেখ করেন। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁর এই বক্তব্যের পরে জেলা নেতৃত্বের অনেকেই রীতিমতো অসন্তুষ্ট হন। যদিও দলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতোর কথায়, ‘‘নিরাপত্তারক্ষী তোলা নিয়ে আমি কী বলব? এটা তো পুলিশ বা গোয়েন্দাদের ব্যাপার।’’ এ নিয়ে চেষ্টা করেও জেলা পুলিশ সুপারের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।