West Bengal Lockdown

‘লকডাউন’-এ বিবর্ণ হচ্ছে ফুলের গ্রাম 

করোনার প্রকোপে রুজিতে টান ধরেছে ফুলের গ্রামে। বিষ্ণুপুর ব্লকের এই গ্রামে ২৫০ বাসিন্দার জীবন চলে  ফুল ফুটিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০১:৪৫
Share:

দেখা নেই ক্রেতার। শুকোচ্ছে পানরডাঙরের ফুলের বাগান। ছবি: শুভ্র মিত্র

শুকিয়ে যাচ্ছে ফুল। পাংশু হচ্ছে ওঁদের মুখগুলিও। করোনা-মোকাবিলায় দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ চলছে। রাস্তাঘাট দোকানবাজার সুনসান। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে ‘ফুলের গ্রাম’ বলে পরিচিত উলিয়ারা পঞ্চায়েতের পানরডাঙরে তাই দেখা নেই ক্রেতার।

Advertisement

শুকিয়ে যাওয়ার আগে পরম যত্নে ফোটানো গাঁদা ফুল ছাগলের মুখের সামনে ধরছেন দীপক বাগ, রাজারাম হাত, উজ্জল বাউরির মতো ফুলচাষিরা। নিজেদের পেট কী করে চলবে, তা জানেন না তাঁরা। জানেন না, আদৌ এই সঙ্কট থেকে কবে মুক্তি মিলবে।

করোনার প্রকোপে রুজিতে টান ধরেছে ফুলের গ্রামে। বিষ্ণুপুর ব্লকের এই গ্রামে ২৫০ বাসিন্দার জীবন চলে ফুল ফুটিয়ে। সারা বছর গ্রামে হরেক রঙের ফুলের চাষ হয়। এই গ্রামের চাষিদের হাতে তৈরি নানা বর্ণের গাঁদার কদর রয়েছে বাইরের ফুলের বাজারগুলিতে।

Advertisement

‘লকডাউন’-এর পরে কেটেছে এক সপ্তাহ। অনেকটাই বিবর্ণ হয়েছে পানরডাঙর। বিঘার পরে বিঘা জমির ফুল মাঠেই পচছে। ক্রেতা নেই। মাঠ থেকে ফুল তুলে ছাগলকে খাইয়ে দিচ্ছেন অনেক ফুলচাষি। ফুলচাষি রাজারামের কথায়, ‘‘ফুল খেত থেকে না তুললে পচে যাবে। সঙ্গে পচবে গাছটাও। গাছ বাঁচাতে কেউ ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে, কেউ গবাদি পশুকে খাইয়ে দিচ্ছে।’’

রাজারামবাবুর মতো অনেক ফুলচাষি এখন মরিয়া ফুলের খেত বাঁচাতে। তাঁদের আশা, ‘লকডাউন’ উঠলে, আবার চাষ শুরু হবে। বাজারে যাবেন তাঁরা। ছন্দে ফিরবে গ্রাম।

এক ফুলচাষির দাবি, ‘‘মাঘের শেষে পাঁশকুড়া থেকে চারা এনে লাগিয়ে ছিলাম। বিঘা প্রতি আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চার-পাঁচ কুইন্টাল গাঁদা ফুল ফুটে আছে খেতে। গরমকালে ৪০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। এ বার এখনও পর্যন্ত দু'হাজার টাকার ফুলও বিক্রি হয়নি।’’

গ্রীষ্মে ফুলচাষে খরচ বেশি হয়। সপ্তাহে দু’বার জল দিতে হয় খেতে। জল কিনতে হয় চাষিদের। পোকার সংক্রমণও এই সময়ে বেশি হয়। ষোলো লিটার জলে ১০ মিলিলিটার কীটনাশক দিতে ১২০ টাকা খরচ হয়। বাজার খোলা থাকলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার ফুল বিক্রি হয়, জানাচ্ছেন অশ্বিনী বাগ এবং ভৈরব হাতের মতো চাষিরা। এখন তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘কে ফুল কিনবে বলুন তো? দোকান বন্ধ, মন্দির বন্ধ। সবাই ঘরবন্দি।’’ তবু গ্রামের অনেকেই ভোরে ফুল নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন শহরে। এক ফুলচাষির কথায়, ‘‘শহরে সাইকেল নিয়ে ঢুকলেই লাঠি হাতে রে-রে করে তেড়ে আসছে পুলিশ।’’

এই সময়ে কোনও জায়গায় ২৪ প্রহর, আবার কোথাও অষ্টপ্রহর নাম সংকীর্তনের আসর বসে। ‘‘লকডাউন-এর ধাক্কায় এখন তা-ও বন্ধ’’, আক্ষেপ করলেন ফুলচাষি দীপক বাগ। প্রায় শুকিয়ে যাওয়া গাঁদার বাগান দেখিয়ে বললেন, ‘‘অনেক কষ্টে ওই ফুলগুলো ফুটিয়েছিলাম। কষ্টের কোনও ফল পেলাম না। বৈশাখে বিয়ের মরসুমে ‘লকডাউন’ উঠবে কি না কেউ জানেন না। জানি না আবার কবে ফুল ফোটাতে পারব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement