প্রতীকী ছবি।
করোনা মোকাবিলায় লক ডাউনের এক মাস পূর্ণ হল। তবে লকডাউন শুরুর আগে থেকেই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, কবে শিক্ষাঙ্গনগুলি খুলবে, কেউ জানে না। দেশের এই জরুরি অবস্থায় চরম ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। চূড়ান্ত ক্ষতির সম্মুখীন পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে স্কুল কলেজে। শুরু হয়েছে টিভিতে ক্লাস। কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে পিছনের সারিতে থাকা গ্রামীণ স্কুল পড়ুয়ারা আদৌ কি অনলাইন ক্লাসথেকে লাভবান হতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
জেলার শিক্ষকদের একাংশের দাবি, এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারেই মোবাইল রয়েছে। অনলাইন ক্লাসেও তাই ভাল সাড়া মিলেছে। সদিচ্ছা থাকলে প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়াটির কাছেও অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া কঠিন কিছু নয় বলে তাঁরা দাবি করছেন। তবে জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকদের মতে, গ্রামের দরিদ্র পড়ুয়াদের ৮০ শতাংশই এর থেকে কোনও লাভ পাচ্ছে না। তাঁদের যুক্তি, প্রথমত পড়ুয়াদের অনেকেই এই পদ্ধতির সঙ্গে সড়গড় নয়। দ্বিতীয়ত, বেশিরভাগের কাছেই ট্যাব বা কম্পিউটার দূরে থাক, স্মার্টফোনই নেই। নেই ইন্টারনেট সংযোগও। এমন অনেক পরিবার রয়েছে যে পরিবারে টিভিও নেই। তাই তাদের কাছে ‘অনলাইন ক্লাস’ আদতে গালভরা শব্দ ছাড়া কিছু নয়।
সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থার করা সর্বভারতীয় একটি সমীক্ষাও সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকদের মতকেই প্রাধান্য দিয়েছে। একটি সর্বভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ওই সমীক্ষা বলছে, দেশের ৮৬ শতাংশ পড়ুয়া, যারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে, তারা এই অনলাইন পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। বীরভূমেও তেমন পড়ুয়ার সংখ্যা কম নয়। ইন্টারনেট বা স্মার্টফোট নেই বলে কি তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে, প্রশ্ন উঠছে।
জেলা শিক্ষা দফতরের দাবি, লকডাউনে জেরে ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের সাহায্য করতে অনেক স্কুল শিক্ষকই প্রযুক্তির ব্যবহার করেছেন। সরকারি কলেজগুলিতে তো বটেই, সরকারি বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষকেরাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ ফেসবুক লাইভ, কেই ইউটিউবে পড়ানোর ভিডিয়ো আপলোড করেছেন। কেউ জ়ুম বা, গুগল ক্লাসরুমের মতো কম্পিউটার অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করেছেন পড়ানোর জন্য। কেউ কেউ আবার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেই ভিডিয়ো, অডিয়ো ও পিডিএফ ফাইল দিয়ে গৃহবন্দি পড়ুয়াদের কাছে হাজির থেকেছেন। রাজ্য সরকারের স্কুল শিক্ষা বিভাগের তরফেও টিভিতে ক্লাস করানো শুরু করেছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক লক্ষ্মীধর দাস দাবি করছেন, ‘‘আমাদের জেলায় সফলভাবে অনলাইন ক্লাস করানো হচ্ছে। রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফে টিভিতে ক্লাস ও যে ওয়ার্কশিট দেওয়া হয়েছে সেগুলি পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। যাতে পড়ুয়াদের সমস্যা না হয়।’’
কিন্তু তারপরও প্রশ্ন উঠেছে ২৪০০টি প্রাথমিক স্কুলের কয়েক লক্ষ পড়ুয়াকে যদি ছেড়েও দেওয়া হয়, জেলার ৬৫৩টি আপার প্রাইমারি স্কুলের ২ লক্ষ ৬৪৩ জন পড়ুয়ার কত শতাংশের কাছে পৌঁছচ্ছে এই প্রযুক্তিনির্ভর পাঠ? শিক্ষকদের কত শতাংশই বা প্রযুক্তি নিয়ে সড়সড়? শিক্ষকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বলছেন, ‘‘যে সব পরিবারে দু’বেলা খাবার যোগানোই চ্যালেঞ্জ, সেখানে গ্রামীণ পড়ুয়াদের কাছে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পৌঁছবে কী করে?’’ জেলার বাস্তব চিত্রও তাঁদের প্রশ্নকেই সমর্থন করছে।