মুখ-ঢেকে: মানবাজারের কিসান মান্ডিতে বিকিকিনি। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’-এর মধ্যে পুরুলিয়া জেলার মানবাজারের কিসান মান্ডি যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। জেলার অন্যত্র বাজার-হাটে ‘মাস্ক’ না-পরে বা মুখ না-ঢেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেখা গেলেও এখানে সে ছবি উধাও। বরং করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনেই এখানে বেচাকেনা চলছে। আর তা সম্ভব হয়েছে, প্রশাসনের লাগাতার নজরদারিতেই।
লোকজনকে ‘মাস্ক’ পরাতে দু’দিন ধরে পুরুলিয়া শহরে ঘুরেছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। মানুষ কেন সতর্ক হচ্ছেন না, এ নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেন তিনি। জেলাশাসকই শনিবার মানবাজারের কিসান মান্ডি পরিদর্শন করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনতা দেখে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া শহরের তুলনায় মানবাজারের কিসান মাণ্ডিতে আসা লোকজন অনেক সচেতন।’’
জেলার কিসান মাণ্ডিগুলির মধ্যে মানবাজার বেশ জনপ্রিয়। তবে ‘লকডাউন’ চালু হওয়ার পর থেকে এখানকার মান্ডিতে ভিড়ে কিছুটা ভাটা পড়েছে। বাজা রে গিয়ে দেখা গেল, ক্রেতা-বিক্রেতা সবারই মুখ ঢাকা। কেউ ‘মাস্ক’ পরেছেন। কেউ রুমাল, কাপড় বা গামছা মুখে জড়িয়েছেন।
বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার পুলিশ ও ব্লকের কর্মীদের নিয়ে কিসান মাণ্ডিতে ঘুরছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দিকে আমরা বিক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব রেখে বসার ব্যবস্থা করি। তার পরে তাঁদের ‘মাস্ক’ বিলি করা হয়। এখন প্রতিদিন সকালে আমি এক বার করে আনাজ বাজারে আসি। মাণ্ডিতে ছ’জন সিভিক ভলান্টিয়ারও রয়েছেন। নিয়মিত নজরদারি রাখার সুফল মিলেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা প্রায় সবাই নাক-মুখ ঢেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাবেচা করছেন।’’
আনাজ ব্যবসায়ী জয়ন্ত মাহাতো, কল্যাণী মাহাতো বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ‘মাস্ক’ পরতে অস্বস্তি হত। এখন ‘মাস্ক’ না বাঁধলে স্বস্তি পাই না। ব্লকের কর্মীরা জানিয়েছেন, কেউ যাতে সংক্রমিত না হয়, সে জন্যই এই নিয়ম।’’ পোদ্দারপাড়ার বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক বৈদ্যনাথ দত্ত বাজারের ফাঁকে বলেন, ‘‘আগে এ ওর ঘাড়ের উপরে উঠে আনাজ কিনতেন। মোটরবাইক ও সাইকেল নিয়ে অনেকে বাজারে ঢুকতেন। স্বস্তিতে হাঁটা যেত না। এখন সে সব বন্ধ। সিভিক ভলান্টিয়ারেরা গেটেই সাইকেল, মোটরবাইক আটকে দিচ্ছেন। দূরে দূরে দোকানিরা বসায়, শান্তিতে বাজার করছি।’’
চাঁদড়া হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক গোপালচন্দ্র দে, পেট্রল পাম্পের কর্মী ফাল্গুনী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বাজারে কেনাকাটার সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। অপ্রয়োজনে কেউ আড্ডা মারছেন না। আগে একটা দরজা দিয়েই যাতায়াত হত। এখন ছোঁয়াছুঁয়ি এড়াতে বাজারে ঢোকা ও বেরোনোর দু’টি আলাদা দরজা করে দিয়েছে।’’ এসডিও (মানবাজার) বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রশাসন ও পুলিশের নিয়মিত নজরদারির ফলেই বেশির ভাগ মানুষজন কিসানমাণ্ডিতে ‘লকডাউন’-এর নিয়ম মেনে চলছেন। তার প্রভাবে রাস্তাঘাটেও মুখ ঢেকে লোকজনকে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।’’