স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে হাতে দেওয়া হচ্ছে কালির দাগ। আদ্রা স্টেশনে সোমবার। নিজস্ব চিত্র
রাজস্থানের পরে, এ বার গুজরাত থেকে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় ফিরলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনে গুজরাত থেকে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রায় সাড়ে ছ’শো পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে পুরুলিয়ার শ্রমিক রয়েছেন ৩১২ জন। ৩৩৩ জন রয়েছেন বাঁকুড়ার। বিডিও (কাশীপুর) সুদেষ্ণা দে মৈত্র বলেন, ‘‘গুজরাত থেকে ফেরা শ্রমিকদের স্টেশনেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরে বিভিন্ন প্রশাসনিক কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।’’ বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) রাজু মিশ্র বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার পরে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।”
ভিন্ রাজ্য থেকে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। গত সপ্তাহেই ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনে পুরুলিয়ার আদ্রা স্টেশনে নেমেছিলেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার পঞ্চাশ জন পরিযায়ী শ্রমিক। ‘আনলক-১’ পর্ব শুরু হওয়ার প্রথম দিনেই এ বার প্রায় চারশো শ্রমিক দুই জেলায় ফিরলেন।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার খবর পৌঁছয়। গুজরাটের আহমেদাবাদ, ভুজ ও ভাবনগর থেকে তিনটি ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেন আসার খবর পেয়েই তৎপরতা শুরু হয় পুলিশ ও প্রশাসনের অন্দরে। পুলিশের দাবি, আহমেদাবাদ থেকে আসা ‘শ্রমিক স্পেশাল’ রবিবার রাত ৩টে নাগাদ আদ্রা স্টেশনে ঢুকবে বলে খবর ছিল। সেই মতো রাতেই পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মীদের পাঠান হয় স্টেশনে। রাত গড়িয়ে সেই ট্রেনটি আদ্রায় পৌঁছয় সোমবার ভোরে।
এর পরেই বেলা পৌনে ১০টা নাগাদ ভুজ থেকে আসে আরও একটি ‘শ্রমিক স্পেশাল’। সাড়ে ১০টা নাগাদ আদ্রায় পৌঁছয় ভাবনগর থেকে আসা ট্রেনটি। রাত ৮টা নাগাদ গুজরাট থেকে আরও একটি ট্রেন আদ্রায় আসে। বাঁকুড়ার জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রবিবার রাতে ভদোদরা থেকে আরও একটি ‘শ্রমিক স্পেশাল’ বাঁকুড়ায় পৌঁছেছিল। রেল সূত্রের খবর, প্রতিটি ট্রেন গুজরাত থেকে হাওড়াগামী। দুই জেলার শ্রমিকদের নামিয়ে দিয়ে গন্তব্যে রওনা হয়েছে।
ভাবানগর থেকে আসা ট্রেনটি ছাড়া অন্য তিনিটি ‘শ্রমিক স্পেশাল’ বাঁকুড়াতেও থেমেছে। ভাবানগর থেকে আসা বাঁকুড়ার লোকজন আদ্রা স্টেশনে নামেন। সোমবার সকালে আদ্রা স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন ঢোকার পরেই শ্রমিকদের নামিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। আঙুলে কালির চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট বাসে ওঠাচ্ছিলেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মীরা। স্টেশনে নেমে দৃশ্যতই খুশি ছিলেন শ্রমিকেরা। তাঁদের মধ্যে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের মহাদেব বাউড়ি, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ভোলানাথ বাউড়ি, কাশীপুরের অসিত সোরেন, পাড়ার নিমাই মোদকেরা বলেন, ‘‘রবিবার ভোরে গুজরাত থেকে ট্রেনে চেপেছিলাম। পথে কোনও সমস্যা হয়নি।’’ গুজরাতের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করা ওই শ্রমিকেরা জানান, বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছিল। তাঁদের কথায়, ‘‘বাড়ির লোকজন বার বার ফেরার জন্য বলছিল। ট্রেনের ব্যবস্থা হতেই দেরি করিনি।”
‘শ্রমিক স্পেশাল’-এ শুধু পরিযায়ী শ্রমিকেরা নন, গুজরাতে আটকে পড়া অন্য কিছু লোকজনও ফিরেছেন। রঘুনাথপুর থানা এলাকার বছর সত্তরের রসিদ আনসারি জানান, স্ত্রীকে নিয়ে গত ৯ মার্চ গুজরাতের ভুজে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ফেরার টিকিট ছিল ২৫ মার্চ। লকডাউন শুরু হওয়ায় ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। সেখানেই আটকে পড়ি। শ্রমিক স্পেশালের খবর পেয়ে টিকিটের ব্যবস্থা করে চেপে পড়েছিলাম।”