প্রতীক্ষা: পুরুলিয়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বাইরে বাসের অপেক্ষায় ভেল্লোর ফেরত মানুষজন। ছবি: সুজিত মাহাতো
লকডাউনে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পরে, ভেল্লোর থেকে বাড়ির পথে যাত্রা করেছিলেন বেশ কয়েকজন পুরুলিয়াবাসী। জেলায় পৌঁছেও তাঁদের চরম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। খড়গপুর থেকে বাসে পুরুলিয়া পৌঁছনোর পরে, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তাঁদের আটকে থাকতে হয়। বৃহস্পতিবার তাঁদের অবস্থার কথা ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাসের বন্দোবস্ত করে সকলকেই বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে প্রশাসন।
জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘সমন্বয়ের অভাবের কারণেই এটা হয়েছে। যাত্রীদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বাসের বন্দোবস্ত করে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’’ ওই যাত্রীদের কয়েকজন জানান, গত ১২ মে একটি বিশেষ ট্রেনে তাঁরা তামিলনাড়ুর কাটপাডি স্টেশন থেকে রওনা দেন। ট্রেনে মূলত ভেল্লোরে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগী ও তাঁদের পরিজনেরাই ছিলেন। বুধবার বিকেলের দিকে ট্রেন খড়্গপুরে পৌঁছয়। খড়গপুরের কাছে হিজলি স্টেশনে যাত্রীদের নামানো হয়। ট্রেনে পুরুলিয়ার ৬২ জন যাত্রী ছিলেন। ট্রেন থেকে নামার পরে, তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা হয়। তার পরে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার দু’'টি বাসে চাপিয়ে বুধবার রাতেই তাঁদের সকলকে পুরুলিয়া পৌঁছে দেওয়া হয়। রাত আড়াইটে নাগাদ বাস দুটি পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে পৌঁছয়। অভিযোগ, ভোগান্তির শুরু সেখানেই।
যাত্রীদের একাংশের দাবি, পুরুলিয়ায় পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের বাসের মধ্যেই বসে থাকতে হয়। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তাঁদের বাস থেকে নামতে দেননি। ক্ষুব্ধ কয়েকজন যাত্রী বাস থেকে নেমে পড়েন। তাঁদের কেউ কেউ পুলিশকে জানান, সঙ্গে ‘ডায়ালিসিস’'-এর রোগী রয়েছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা দরকার। কিন্তু তাঁদের কোথায় কর্ণপাত করা হয়নি বলে অভিযোগ। এক যাত্রীর দাবি, ‘‘ওখান থেকে কোন গাড়িতে বাড়ি যাব, জানতে চাওয়ায় এক পুলিশকর্মী আমাদের বলেন, যাত্রীরা যে এখানে আসবেন, তার কোনও খবর তাঁদের দেওয়া হয়নি।’’
যাত্রীরা তাঁদের বাড়ির লোকজনকে ফোন করে ‘অব্যবস্থা’র নালিশ জানান। শহরের আশপাশের যাত্রীদের আত্মীয়েরা ভোর হওয়ার আগেই হাতোয়াড়ায় পৌঁছে যান। এক যাত্রীর আত্মীয়ের দাবি, ‘‘পুলিশকর্মীরা জানিয়ে দেন, কী ভাবে যাত্রীরা বাড়ি ফিরবেন, তা তাঁরা জানেন না। তখন কেউ কেউ প্রশাসনিক আধিকারিকদের ফোনে ধরার চেষ্টা করেন। অনেকে তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন।’’
যাত্রীদের একাংশের দাবি, ‘অব্যবস্থা’র কথা কোনও ভাবে প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে পৌঁছলে বাসের ব্যবস্থা করা হয়। পরে তিনটি বাস হাতোয়াড়া পৌঁছলে যাত্রীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়। এর পরে যাত্রীদের তুলে বাস তিনটি বিভিন্ন দিকে রওনা দেয়। জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, রেলের সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয়ের অভাবের কারণে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়।