বাঁকুড়া শহরের সভায় ভিড় গ্রামের

ভোট দিন প্রতীক দেখে, আবেদন অভিষেকের

পুরুলিয়ার সভাকে ছাপিয়ে গেল অভিষেকের বাঁকুড়ার সভার ভিড়। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যা ভিড় হয়েছিল, বুধবার তার ঢের বেশি ভিড় দেখা গেল মাচানতলার সভায়। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, বাঁকুড়ায় এ দিনের সভায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। আর তৃণমূলের দাবি, ভিড়টা অন্তত ১৫ হাজারের। সামনেই পুরসভার ভোট। নির্বাচনী সভাও সেই উপলক্ষে। অথচ বাঁকুড়ার সেই সভা ভরল গ্রামগঞ্জের লোকে। ধামসা-মাদল নিয়ে আদিবাসী বেশ ভাল সংখ্যার উপস্থিতি সেটাই জানান দিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৪
Share:

সমর্থকদের ভিড়ে। বাঁকুড়ায় অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

পুরুলিয়ার সভাকে ছাপিয়ে গেল অভিষেকের বাঁকুড়ার সভার ভিড়। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যা ভিড় হয়েছিল, বুধবার তার ঢের বেশি ভিড় দেখা গেল মাচানতলার সভায়। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, বাঁকুড়ায় এ দিনের সভায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। আর তৃণমূলের দাবি, ভিড়টা অন্তত ১৫ হাজারের।

Advertisement

সামনেই পুরসভার ভোট। নির্বাচনী সভাও সেই উপলক্ষে। অথচ বাঁকুড়ার সেই সভা ভরল গ্রামগঞ্জের লোকে। ধামসা-মাদল নিয়ে আদিবাসী বেশ ভাল সংখ্যার উপস্থিতি সেটাই জানান দিল। এ দিন সভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও বিরোধীরা ওই সভায় পুরএলাকার কতজন ভোটার ছিলেন, সে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। রাতে সোনামুখীর সভাতেও বেশ ভিড় ছিল।

মাচানতলা পেট্রোলপাম্প মোড়ে এ দিন দুপুর ৩টে তে সভা করেন অভিষেক। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন ও মুনমুন সেন এবং গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। তাই এই হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীদের সমাবেশকে ঘিরে পুরবাসীর উৎসাহ থাকারই কথা। অথচ সভাস্থলে বাঁকুড়া পুরএলাকার বাইরে থেকে আসা লোকজন ও আদিবাসীদের ভিড়ে পুরবাসীদের নেহাতই নগন্য দেখিয়েছে এ দিন। সভার শুরুতে গান গাইতে গিয়ে আদিবাসীদের হাতে ধামসা-মাদল দেখে ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ গেয়ে সভা শুরু করেছেন ইন্দ্রনীল। ভিড় দেখে নির্বাচনী সভাকে ‘বিজয় সভা’ বলে উল্লেখ করেছেন ডেরেক। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে উঠে মুনমুনও বলেন, “আমার আদিবাসী ভাইবোনেরা আবার এসেছেন। তাঁরা দাঁড়িয়ে শুনছেন কথা। মনে হচ্ছে যেন বাড়িতে ফিরে এলাম।”

Advertisement

তবে সবাইকে ছাপিয়ে নিজের বক্তব্যে নজর কেড়েছেন অভিষেক। আগাগোড়া দিল্লির বিজেপি সরকার ও বামফ্রন্টকে আক্রমণ করেছেন তিনি। তুলে ধরেছেন তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের কাজ। নরেন্দ্র মোদীর বিলাসবহুল জীবনযাপনের সঙ্গে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন যাত্রার তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন বিশুদ্ধ লোহা। ইডি, সিবিআইয়ের ভয় দেখালে আমাদের সমর্থন বাড়বে। তাই বিরোধীরা ওসব বলে আমাদের হারাতে পারবে না।’’

রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। এ দিন অভিষেক বলেন, “ধর্ষণ হলেই তো অনেকে অনেক কিছু বলছেন। শমীক ভট্টাচার্য, রাহুল সিংহ, অধীররঞ্জন চৌধুরী, সুজন চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্ররা আগেও এই রাজ্যেরই বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ড, নেতাই কাণ্ড, নন্দীগ্রাম কাণ্ডের সময় তাঁরা কোথায় ছিলেন?’’

পুরভোটে বাঁকুড়া পুরসভায় ২৪টি ওয়ার্ডই বিরোধী শূন্য করার ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “ভোট দিন প্রতীক দেখে। প্রতিটি ভোটই চলে যাবে কালীঘাটে। ২৪টি ওয়ার্ডেই বিরোধী শূন্য করে বিজেপির ভুঁইফোড় ও সিপিএমের হার্মাদ নেতাদের বুঝিয়ে দিন বাংলায় তাঁদের কোনও জায়গা নেই।” আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে বাঁকুড়ার উন্নয়নে চোখ রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, জেলার তিনটি পুরসভাতেই ভোটের দিনে বহিরাগতদের নিয়ে তৃণমূল হামলা চালানোর চেষ্টা করছে বলে মঙ্গলবারই পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছে সিপিএম। এ দিনের সভায় গ্রাম গঞ্জ থেকে লোক আনার পিছনেও সন্ত্রাসের ছক রয়েছে বলে দাবি করছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র। তিনি বলেন, “সভাকে কেন্দ্র করে বাইরের লোক শহরে আনল তৃণমূল। এদের একটা অংশ ফিরে যায়নি। ওরা শহরেই রয়েছে। পুরভোটে সন্ত্রাস করাই ওদের লক্ষ।” বিষয়টা কি পুলিশ প্রশাসনকে জানাবেন? অমিয়বাবুর উত্তর, “আমরা ভাবনা চিন্তা করছি”। অন্যদিকে এই সভা বিজেপিকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে বলে দাবি করছেন দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার। তিনি বলেন, “সভা ভরাতে গ্রাম থেকে লোক নিয়ে এসে তৃণমূল এটাই বোঝালো যে শহরে ওদের সমর্থন কমে গিয়েছে। এতে আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “আমরা আশা করেছিলাম শাসক দল ফের ক্ষমতায় এলে আগামী পাঁচ বছর তারা কী করবে সেই পরিকল্পনার কথা মানুষের সামনে তুলে ধরবে। কিন্তু এ দিনের সভায় পুরসভা প্রসঙ্গে কোনও আলোচনাই হয়নি। শুধু রাজনৈতিক কথাবার্তায় মানুষের আস্থা মিলবে না।”

কেন বাইরে থেকে লোক আনতে হল? জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “অভিষেকের সভা ভরানো আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। সভাটিকে আমরা সেরা সভায় পরিণত করতে চেয়েছিলাম।” তবে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, “অভিষেক বহু দিন পরে জেলায় এলেন। তাই যুব কর্মীদের তাঁকে দেখার আগ্রহ ছিল। নিজেরাই উৎসাহিত হয়ে সভায় এসেছিলেন।”

জেলা সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “অভিষেক আমাদের রাজ্য নেতা। তাই গোটা জেলা থেকেই মানুষ তাঁর সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন।” তাঁর দাবি, “সভার বহর দেখে মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে বিরোধীদের। তাই পাগলের প্রলাপ বকা শুরু করেছে। ভোটের ফলাফলে ওরা ‘হাফিস’ হয়ে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement