চৈত্র সেল
সিউড়িতে জমে উঠেছে চৈত্র সেল। মসজিদ মোড় সংলগ্ন রাস্তায় হরেক মালের বিকিকিনি। এক বস্ত্র বিক্রেতা নানা জিনিসের সঙ্গে বিক্রি করছেন শাসকদলের প্রতীক চিহ্নযুক্ত গেঞ্জিও। দাম ৭০ টাকা। বিক্রেতা রবিউল শেখ বলছেন, ‘‘কলকাতা থেকে মাল কেনার সময় গেঞ্জিগুলি নজরে পড়েছিল। কিনে ফেলি। ভোটের বাজার বলে কথা!’’
জাহাজডুবি
রবিবার শতাব্দীর সভা দুবরাজপুরে। কখন আসবেন নেত্রী, উৎকণ্ঠায় কর্মী-সমর্থকেরা। সুদৃশ পঞ্জাবি পরে অপেক্ষায় ছিলেন তিনিও। মাস কয়েক আগেও যিনি ছিলেন অন্য দলে। পথে ওই নেতার উদ্দেশে এক পরিচিতের কটাক্ষ, ‘‘সবাই সবুজ হয়ে গেলেন!’’ সেকেন্ডেই ওই নেতার প্রত্যুত্তর “জাহাজ ডোবার সেটাই তো সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত, নয় কি?”
কোন বলরামপুর
বলরামপুরের বুথে ঝামেলা হচ্ছে। বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রচার হতে শুরু করার পর কর্মীদের একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে তালড্যাংরার জোট প্রার্থী সিপিএমের অমিয় পাত্রের মোবাইলে। অমিয়বাবু তখন খালগ্রাম এলাকার বিভিন্ন বুথে বুথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোন বলরামপুর? বারেবারে জিজ্ঞাসা করেও কিছুতেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হচ্ছিল না অমিয়বাবুর কাছে। শেষে পুরুলিয়ার এক কর্মীকে ফোন করে জানতে পারলেন, তালড্যাংরার নয়, পুরুলিয়ার বলরামপুরের একটি বুথে ঝামেলা হচ্ছে। শুনে অমিয়বাবুর মন্তব্য, “সবার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কোন বলরামপুর না জেনেই আমাকে বারবার ফোন করছে। এদের নিয়ে আর পারি না!”
ভোটের লাইন
রাস্তা সংস্কার এবং পানীয় জলের দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলে বাসিন্দাদের একাংশ। বিডিওর অনুরোধেও টলেননি তাঁরা। সেই মতো সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মানবাজার থানার পিয়ালশোল গ্রামের বুথের কোনও ভোট পড়েনি। বুথ কর্মীরা বসে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ দু’জন ভোটার গুটি গুটি পায়ে এসে ভোট দিয়ে গেলেন। আর যায় কোথায়! যাঁরা বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে শুরু হল ধুন্ধুমার ঝামেলা। ব্যাপারটা ইট পাটকেল ছোঁড়াছুঁড়ি অবধি গড়ালে পুলিশের বিশাল বাহিনী এসে সামাল দেয়। তারপর বেলা বাড়তেই একটু একটু করে লাইন বাড়তে শুরু করল বুথের সামনে। দিনের শেষে পিয়ালশোল এবং চিরুভিটা গ্রাম মিলিয়ে ৮০০ ভোটারের মধ্যে প্রায় ২৫০ জন ভোট দিয়েছেন ওই বুথে।
যন্ত্রই খারাপ
ইভিএম খারাপ থাকায় প্রায় আধঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকল রানিবাঁধ বিধানসভা কেন্দ্রের ২৩০ নম্বর গাড়রা প্রাথমিক স্কুলের বুথে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে ভোটগ্রহণ যন্ত্রে গোলমাল দেখা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে মেশিন সারিয়ে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অন্যদিকে, ইভিএম মেশিন জানলার পাশে রাখা হলেও পর্দা দেওয়া হয়নি, এই মর্মে অভিযোগ তুলে রাইপুর কেন্দ্রের নারায়ণপুর বুথে ভোটগ্রহণ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। পরে পর্দা নিয়ে এসে ইভিএম আড়াল করার পর ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
কার্ড খুঁজতে
হাইস্কুল মোড় এলাকায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন তালড্যাংরা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সমীর চক্রবর্তী। হঠাৎ বেজে উঠল মোবাইল। অন্য প্রান্তে লোকটির বক্তব্য, তিনি ভোট দিতে চান। কিন্তু ভোটার কার্ড খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রার্থী যেন কিছু করেন। এমন আবদার শুনে রীতিমতো মেজাজ খাপ্পা সমীরবাবুর। বললেন, “আমি কী করব মশাই! যান কার্ড খুঁজুন।’’ ফোন কেটেও বিড়বিড় করতে থাকেন প্রার্থী, ‘‘কী অশান্তি রে বাবা!’’
বদ অভ্যাস
পুকুড়িয়া মোড়ের চায়ের দোকানে তখন জোরদার আলোচনা চলছে। টিভি চ্যানেলে খবর দেখানো হচ্ছে— কাজে ফাঁকি দিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী নাকি সিমলাপালের বাজারে কেনাকাটা করছে। সেই আলোচনায় বয়স্ক এক ব্যক্তি টিপন্নী কাটলেন, ‘‘বাইরে থেকে এসে জওয়ানরা দেখছি, এই ক’দিনেই বাঙালিদের থেকে ফাঁকি মারার বদ অভ্যাসটা রপ্ত করে ফেলেছে।”
উলট পুরাণ
বুথে ঢুকেছে রাজ্য পুলিশ। এই অভিযোগ ওঠে তালড্যাংরা কেন্দ্রের ভালুকবাসা প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, বুথের সেক্টর অফিসার পোলিং-এর হিসাব জানতে বুথে ঢুকেছিলেন। তবে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ দিকে বিষয়টি নিয়ে সরব হন বিরোধীরা। তালড্যাংরা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী অমিয় পাত্রের মন্তব্য, “দিনভর গ্রামে গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল দেওয়ার কথা ছিল। তা তো হলই না। উল্টে বুথে রাজ্য পুলিশের ঢোকা নিষিদ্ধ হলেও তারা সেখানে ঢুকে পড়ল।’’
সীমানায় গুলি
রবিবার রাতে বান্দোয়ান-ঝাড়খণ্ড সীমানায় আসনপানি গ্রামের কাছে রুটমার্চ করছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। হঠাৎ তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুটে আসে। তাঁরাও পালটা গুলি চালালে অন্য পক্ষ রণে ভঙ্গ দেয়। বাহিনীর এক জওয়ানের দাবি, দিন দুয়েক আগেও এই এলাকায় রুটমার্চ করার সময় এ ভাবেই গুলি বিনিময় হয়েছিল। তবে এ দিনও জানা যায়নি কে বা কারা গুলি চালিয়েছে। চিরুনি তল্লাশি করেও কারও সন্ধান মেলেনি কারও।