তহবিলে ঘাটতি, বলছে বিশ্বভারতী

বকেয়ার দাবিতে অবস্থান

কর্মিসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বকেয়া মেটানোর দাবিতে চলতি বছর ১৯ মে উপাচার্যের হাতে ১২ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩১
Share:

একজোট: কর্মবিরতিতে কর্মিসভার সদস্যরা।—ফাইল চিত্র

সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে তাঁদের প্রাপ্য বকেয়া ৩১ অগস্টের মধ্যে মেটানো না হলে কর্মবিরতি এবং অবস্থানে বসার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিল বিশ্বভারতীর কর্মিসভা। সোমবার সকালে তা-ই করলেন সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে কালো ব্যাজ পরে অবস্থানে বসলেন কর্মিসভার শতাধিক সদস্য। দাবি তুললেন, অন্যান্য কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ পুরোপুরি কার্যকর করলেও, বিশ্বভারতীতে তা করা হচ্ছে না। ৫০ শতাংশ এরিয়ার এখনও বকেয়া রয়েছে।

Advertisement

কর্মিসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বকেয়া মেটানোর দাবিতে চলতি বছর ১৯ মে উপাচার্যের হাতে ১২ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। এর পরে ১১ অগস্ট বকেয়ার দাবিতেই কর্মসচিব ও ফিনান্স অফিসারকে ঘিরে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভও দেখান কর্মীসভার সদস্যেরা। তাতেও সুরাহা হয়নি বলে কর্মিসভার অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা কর্মবিরতি শুরু করলেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যেরা। বকেয়া মেটানো ছাড়াও এ দিনের অবস্থানে পড়ুয়াদের ভর্তির ফি-বৃদ্ধি, ছাত্রাবাসগুলির অব্যবস্থা, ক্যান্টিনে সমস্যা, রিসার্চ স্কলারদের ফেলোশিপ দেওয়ার দাবি ওঠে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে চলে অবস্থান। কর্মিসভার সভাপতি গগন সরকার বলেন, ‘‘আমাদের দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’

কর্মিসভার সদস্যসংখ্যা প্রায় ৭০০। সংগঠন সূত্রে খবর, তাঁদের বেশির ভাগই এ দিন কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছিলেন। অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতির জেরে বিশ্বভারতীর স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা ছড়িয়েছে। তবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, সোমবার সেখানে কাজকর্ম ব্যাহত হয়নি। তবে, আগামী দিনেও কর্মবিরতি চললে কী ভাবে পরিস্থিতি সামলানো হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার এ সব দাবির বিষয়ে কর্মসচিব, ফিনান্স অফিসার, কর্মিসভা, অধ্যাপকসভা, কর্মিমণ্ডলী, বিভিন্ন ভবনের ডিরেক্টর এবং আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বৈঠকে কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বেতন ও পেনশন তহবিলে ঘাটতি থাকায় বকেয়া এরিয়ার এখনই মেটানো সম্ভব হবে না। ঘাটতি মিটলে তার ব্যবস্থা করা হবে। এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তহবিলে ঘাটতি থাকায় বকেয়া মেটানো যাচ্ছে না। টাকা মিললেই তা মেটানো হবে।’’ তিনি জানান, বিশ্বভারতীর তরফে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা নিজেদের খরচে নয়াদিল্লিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে বকেয়া মেটানোর বিষয়ে দরবার করবেন।

শুধু কর্মীদের এরিয়ার নয়, বকেয়া রয়েছে নন-নেট ফেলোশিপের টাকাও। রবিবারই ওই টাকা ফেরতের দাবিতে বিশ্বভারতীতে অবস্থান বিক্ষোভ করেন গবেষণারত পড়ুয়ারা। এ ক্ষেত্রেও অনির্বাণবাবু জানিয়েছিলেন, মঞ্জুরি কমিশনের তরফ থেকে এখনও কোনও টাকা না পাঠানোয় বকেয়া ফেলোশিপ দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। টাকা পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ফেলোশিপের বকেয়া টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, বিশ্বভারতীতে যে একটা আর্থিক সঙ্কট চলছে, তা এই ধরনের ঘটনায় ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

সোমবার বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে যৌথ এক সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, রবিবার উপাচার্যের কাছে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে ৫০ শতাংশ বকেয়া মেটানোর আর্জি জানানো হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই বিশ্বভারতীর পঠনপাঠন যেন ব্যাহত না হয়, তা নিয়ে সব পক্ষকে সতর্ক থাকার আবেদনও জানানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement