বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কর্মকাণ্ড ইত্যাদি নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বভারতীর শিক্ষকের বরখাস্ত নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখেছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা। সেই চিঠিতে সই ছিল নোয়াম চমস্কি থেকে অমর্ত্য সেনের কন্যা অন্তরার। তার পাল্টা হিসাবে বিবৃতি দিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিবৃতির ছত্রে ছত্রে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কেন চাকরি গিয়েছে অর্থনীতির শিক্ষক তথা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের। তার পর প্রশ্ন তোলা হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠির প্রেরকদের নিয়ে। বিশ্বভারতীর অভিযোগ, ‘অদ্ভুত ভাবে’ চিঠিতে যাঁদের সই রয়েছে, তাঁদের সিংহভাগই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের। এবং বাঙালি।
বিশ্বভারতীর শিক্ষকের চাকরি যাওয়া নিয়ে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন শিক্ষা জগতের বিশিষ্টরা। তাতে বলা হয়েছে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে যে ভাবে সুদীপ্তকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তা নিন্দনীয়। এ ব্যাপারে দ্রৌপদী মুর্মুর পদক্ষেপের আবেদন করেন সুমিত সরকার, প্রভাত পট্টনায়ক, নিবেদিতা মেনন, যোগেন্দ্র যাদব, আব্দুল কাফি, জয়তী ঘোষের মতো ২৬১ জন বিশিষ্ট শিক্ষক।
এ ছাড়াও একই দাবিতে একটি অনলাইন পিটিশনেও সই করছেন বিদ্বজ্জনেরা। সেখানে স্বাক্ষর রয়েছে অমর্ত্য সেন এবং নবনীতা দেবসেনের কন্যা অন্তরা দেবসেনেরও। এক হাজারের বেশি বিশিষ্টের সই রয়েছে সেখানে। তাঁদের অভিযোগ, বিশ্বভারতীর মান ক্রমশ নামছে। অব্যবস্থা এবং স্বেচ্ছাচারিতা বাড়ছে। এ জন্য দায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য।
এই প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বভারতীর অভিযোগ, সুদীপ্ত ভট্টাচার্য শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতেন না। বরং তিনি এমন কিছু কাজে জড়িয়েছেন, যা সরাসরি কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা করে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অশান্তি, বহিরাগতদের নিয়ে এসে ঝামেলা করা, হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তাঁর দেহ নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে চলে যাওয়ার মতো বিষয়ে সুদীপ্ত জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, যে শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে বিশিষ্টরা রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন, সেই শিক্ষককে ১৪ বার শোকজ় নোটিস পাঠানো হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ১৪ বার। এর মধ্যে মাত্র দু’বার তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য হাজির হন। কিন্তু ওই দু’বারই তাঁর বক্তব্যে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে তদন্তকারী কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে উঠে এসেছে, ২০২০ সালে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের বিশ্বভারতীতে যাওয়ার পর অশান্তি-প্রসঙ্গও। সেখানেও ওই শিক্ষককে দায়ী করেছেন কর্তৃপক্ষ। সুদীপ্তের বিরুদ্ধে ৬ দফা অভিযোগ করে বিবৃতির শেষে লেখা হয়েছে, গত তিন বছর ধরে অধ্যাপকের বিভিন্ন হিংসার কাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলার পর এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।