পুরুলিয়া ১ ব্লকের রামনগর গ্রামে মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে পানীয় জলের সংযোগ দিতে হবে, এই দাবিতে গ্রামবাসীর বাধায় ফের আটকে গেল সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পানীয় জল প্রকল্পের কাজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত অগস্ট মাসে এই কাজের অগ্রগতি নিয়ে খোঁজ নিলেও গ্রামবাসীর বাধায় কার্যত শুরুই করা যায়নি আটকে থাকা এই প্রকল্পের বাকি কাজ।
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কংসাবতী নদী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ২.৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৪-র শেষের দিকে। সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূর থেকে মাটির নীচের পাইপলাইনের মাধ্যমে জল নিয়ে আসার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী থেকে যে পথ দিয়ে পাইপ লাইন নিয়ে আসা হবে, সেই পথে পুরুলিয়া ১ ব্লকের রামনগর গ্রাম রয়েছে। জল প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই গ্রামবাসী দাবি তোলেন, তাঁদের গ্রামেও পানীয় জলের সংযোগ দিতে হবে। কিন্তু প্রকল্পের নকশায় ওই গ্রামে পানীয় জলের সংযোগের বিষয়টি নেই। তা জানতে পেরে প্রতিবাদে নামেন গ্রামবাসী।
গত সেপ্টেম্বরে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার গ্রামে পাইপ লাইনের বসানোর কাজ করতে গেলে কাজ বন্ধ করে দেন মানুষজন। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সাধন গড়াই বলেন, ‘‘সেই তখন থেকেই কাজ বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার এই প্রকল্পের আটকে থাকা বাকি কাজটুকু করার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু, এ দিন ফের একই অজুহাতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রামবাসী।’’
এ দিন রামনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাসিন্দারা কার্যত ঘেরাও হয়ে রয়েছেন ঠিকাদার। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই মহিলা। তাঁদের মধ্যে দীপালি মাহাতো, অলকা মাহাতো, টুম্পা গড়াই, প্রতিমা কালিন্দী, প্রভা মুদি দাবি করেন, ‘‘গ্রামে পানীয় জলের সংযোগ দিতে হবেই। আর কোনও কথা শুনব না।’’ গ্রামবাসীর অভিযোগ, এর আগে যখন এই গ্রামের উপর দিয়ে সৈনিক স্কুলের পানীয় জল প্রকল্পের পাইপ নিয়ে যাওয়া হয়, তখনও তাঁরা একই ভাবে গ্রামে পানীয় জলের সংযোগ দাবি করেছিলেন। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, প্রকল্প হয়ে যাওয়ার পরে গ্রামে জলের সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু আজও সেই সংযোগ দেওয়া হয়নি। ঠিকাদার বলেন, ‘‘এ দিনও কাজ শুরু করতে পারলাম না। বিষয়টি আমি দফতরকে জানাব।’’
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার সনৎ অধিকারী বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের কাজ কেবলমাত্র ওই গ্রামটিতেই আটকে রয়েছে। দু’দিকে পাইপ পাতা হয়ে গিয়েছে। ওই গ্রামের কাছে ৩০০-৪০০ মিটার জায়গাতেই শুরু পাইপ পাতা বাকি।’’ তিনি জানান, ওই গ্রামের পানীয় জল প্রকল্পের জন্য পৃথক একটি প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হলেও কাজ শুরু হবে।’’
এই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই এলাকার বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতো রাজ্যের একজন মন্ত্রীও। বিষয়টি তাঁকেই দেখতে হবে।’’ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘ওই গ্রামের পানীয় জল প্রকল্পের বিষয়টি দেখছি।’’
সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন আমাদের ভূগর্ভের জল তুলে কোনও মতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ভূগর্ভের জলস্তর নেমে গেলে যে কোনও সময় আমাদের জল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সামনেই গ্রীষ্মকাল। তারমধ্যে পাইপ লাইনে জল না এলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়তে পারে।’’