Nanur

গ্রামবাসীরাই ফেরালেন বন্ধ হয়ে যাওয়া দিনমজুরের পুজো

গ্রামের উত্তর এবং দক্ষিণপাড়ায় একটি করে পুজো চালু হয়েছে। কিন্তু হাজরা পাড়ার পুজোটি আর চালু করতে পারেননি বর্তমান প্রজন্মের সদস্যেরা। এ নিয়ে তাঁদের আক্ষেপ ছিল।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

নানুর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৩৯
Share:

লাভপুর জুভেনাইল ক্লাবের প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

সে প্রায় ১৫০ বছর আগের কথা। নানুরের বেলুটি গ্রামে কোনও পুজো হত না। অনেকে পুজো দেখতে আত্মীয়দের বাড়িতে যেতেন। তাই মন খারাপে পুজো কাটত গ্রামবাসীর। সে সময়ে গ্রামে পুজো শুরুর স্বপ্নাদেশ পান প্রয়াত গিরিশ হাজরা। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাতের ঘুম উবে যায় তাঁর। দুর্গাপুজো করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। দিনমজুরি করে কোনওক্রমে সংসার চলে তাঁর। আবার মায়ের স্বপ্নাদেশ উপেক্ষাও করা যায় না। অগত্যা স্বপ্নাদেশের কথা বন্ধুদের খুলে বলেন। তাঁরাও স্বপ্নাদেশের কথা শুনে, গ্রামে একটা পুজো প্রচলনের তাগিদ অনুভব করেন। তাঁদের সহযোগিতায় হাজারা পাড়ায় চালু হয় গ্রামের প্রথম দুর্গোৎসব। বছর কুড়ি চলার পরে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় সেই পুজো।

Advertisement

এর মধ্যে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ গ্রামের উত্তর এবং দক্ষিণপাড়ায় একটি করে পুজো চালু হয়েছে। কিন্তু হাজরা পাড়ার পুজোটি আর চালু করতে পারেননি বর্তমান প্রজন্মের সদস্যেরা। এ নিয়ে তাঁদের আক্ষেপ ছিল। সেই আক্ষেপের কথা শুনে প্রতিবেশীরা এ বছর থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই পুজোটি ফের চালু করতে উদ্যোগী হয়েছেন। পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন লাগোয়া দাস এবং বাগদিপাড়ার লোকেরাও। কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে পুজোর আয়োজনে লেগে পড়েছেন তাঁরা। রাম হাজরা, শ্রীধর দাস, সৌভাগ্য বাগদিরা বলেন, ‘‘হাজরা পরিবারের সদস্যদের আক্ষেপের কথা শুনে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারিনি।’’

গৃহবধু তোফা হাজরা, বেবি দাস, সন্তোষী হাজরারা বলেন, ‘‘গ্রামে অন্য পুজো থাকলেও, নিজের পাড়ার পুজোর আনন্দটাই আলাদা। আল্পনা আঁকা, অঞ্জলি দেওয়া— সব কিছুই স্বাধীন ভাবে করার সুযোগ পাব।’’ সব থেকে খুশি কচি-কাঁচারা। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নিশা হাজরা, গোষ্ঠগোপাল হাজরারা বলে, ‘‘বন্ধুদের পুজো দেখতে নিমন্ত্রণ করেছি। তাদের নিয়ে ভোর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত আনন্দ করব।’’

Advertisement

এ পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা গোপাল মৈত্র, প্রসাদ হাজরা বলেন, ‘‘প্রথম দিকে আমরাও সাহস করিনি। কিন্তু গ্রামেরই সুবীরকুমার পাণ্ডা পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়ায় আর ভাবিনি। চাঁদা ওঠার পরে যা ঘাটতি হবে, তা উনিই পূরণ করে দেবেন বলেছেন।’’ সুবীরবাবু বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের আবেগের কথা ভেবেই আমি পাশে থাকার সিদ্ধান্তনি।’’

হাজরা পরিবারের বর্তমান বংশধর ৭৩ বছরের নবকুমার হাজরা, ৬৮ বছরের বেনুকর হাজরা বলেন, ‘‘পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মনের মধ্যে একটা অপরাধবোধ ছিল। এত দিনে সেটা দূর হল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement