মজুরি চেয়ে তালা পঞ্চায়েতে

বছরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করেও মজুরি মেলেনি। বারবার পঞ্চায়েতে তাগাদা দিয়ে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। অবিলম্বে মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া ১ ব্লকের সোনাইজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিলেন শ্রমিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১১
Share:

বছরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করেও মজুরি মেলেনি। বারবার পঞ্চায়েতে তাগাদা দিয়ে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। অবিলম্বে মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া ১ ব্লকের সোনাইজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিলেন শ্রমিকেরা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বালিগাড়া, সোনাইজুড়ি, রামনগর-সহ সংলগ্ন এলাকার শ’খানেক পুরুষ ও মহিলা পঞ্চায়েত অফিসে হাজির হয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা এই পঞ্চায়েত এলাকায় একশো দিনের বিভিন্ন কাজের প্রকল্পে কাজ করলেও এখনও মজুরি পাননি। বালিগাড়া গ্রামের নবীন মাহাতো বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী একটি পুকুর সংস্কারের কাজ করছিল। সে-ও বছর খানেক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও মজুরির টাকা মেলেনি।’’ নবীনবাবু নিজে গত বছর বর্ষার সময় গাছ লাগানোর জন্য মাটি কাটার কাজ করেছিলেন। সেই কাজেরও মজুরি পাননি বলে তাঁর অভিযোগ। রামনগর গ্রামের বাসিন্দা গোপাল গরাঁইয়ের ক্ষোভ, ‘‘প্রায় আট মাস আগে আমরা প্রায় একশো শ্রমিক একটি পুকুর সংস্কারের কাজ করেছিলাম। আজও মজুরির টাকা পাইনি।’’ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অনিল মাহাতোরও এক অভিযোগ। আর এক শ্রমিক পরমানন্দ মাহাতোর কথায়, ‘‘আমিও পুকুর সংস্কারের কাজ করেছিলাম। কিন্তু এখনও টাকা পাইনি।’’ স্থানীয় সিপিএম নেতা শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘যাঁরা এ দিন পঞ্চায়েতে এসেছেন, তাঁরা দিন আনি দিন খাই পরিবারের। এত দিন ধরে বারবার পঞ্চায়েতে মজুরির জন্য তাগাদা দিয়ে টাকা না পেয়ে অধৈর্য হয়ে এ দিন তাঁরা পঞ্চায়েতে হাজির হয়েছিলেন।’’ ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েত অফিসে এসে এ দিন প্রধান শম্পা বাউরিকে না পেয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁরা দাবি করেন, অবিলম্বে তাঁদের প্রাপ্য মজুরি মিটিয়ে দিতে হবে।

বিডিও (পুরুলিয়া ১) স্বপন মাইতি বলেন, ‘‘যাঁরা আজ পঞ্চায়েতে তাঁদের মজুরি চাইতে এসেছিলেন, তাঁদের দাবির সঙ্গে আমি সহমত। কিন্তু, এফটিও (ফান্ড ট্রান্সফার অর্ডার) নামে কিন্তু একটি নতুন সিস্টেমের শিকার হয়ে ওই শ্রমিকদের মজুরির বিষয়টি এখনও আটকে রয়েছে।’’ বিডিও জানিয়েছেন, এত দিন সোনাইজুড়ি সদরের ডাকঘরে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট ছিল। কিন্তু, সেখান থেকে এলাকারই অন্য ডাকঘরে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছে। সেই ডাকঘর শ্রমিকদের পুরনো অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না। নতুন অ্যাকাউন্ট চালু করার প্রক্রিয়ায় একটু সময় লাগছে। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘কী ভাবে এই কাজ আরও দ্রুত করা যায় বা সমস্যার সমাধান কী ভাবে করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও ওই পঞ্চায়েত গিয়েছিলেন।’’

Advertisement

এ দিন পুরুলিয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ্মাবতী মাহাতো পঞ্চায়েতে গিয়ে তালা খুলে ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তিনি পঞ্চায়েতে আসার পরে প্রধানও সেখানে পৌঁছন। পদ্মাবতীদেবী বলেন, ‘‘কিছু সমস্যা রয়েছে। পঞ্চায়েত কর্মীরা মজুরির বিষয়টি সমাধানের জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু, যেখানে শ্রমিকদের সমস্যা, সেই ডাকঘরে যোগাযোগ করে সমাধানের উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল। এই বিষয়টি পঞ্চায়েত কর্মীদের দেখতে বলা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, কিছু শ্রমিকের নাম মাস্টর রোলে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ শ্রমিকেরা দাবি করছেন, তাঁরা প্রকল্পে কাজ করেছেন। এটা কী ভাবে হল, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement