নিদান: ষাটপলশায়। নিজস্ব চিত্র
ট্রাক চলবে ধীর গতিতে। আর গাড়ির সামনে হাঁটা লাগাবেন সেই ট্রাকের খালাসি। দুর্ঘটনা কমাতে এমনই এক অভিনব উপায় বের করেছেন গ্রামবাসী।
যানবাহনের বেপরোয়া গতির ফলে একের পর একে দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে আবেদন নিবেদন থেকে পথ অবরোধ পর্যন্ত করেছেন। বিক্ষোভের মুখে ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার’ আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা তাই দুর্ঘটনা রুখতে নিয়েছেন এই পদক্ষেপ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ময়ূরেশ্বরের তালতলা থেকে ষাটপলশা পর্যন্ত ময়ুরাক্ষী নদীতে বহু বালিরঘাট রয়েছে। ওইসব ঘাট থেকে বালি বোঝাই অধিকাংশ ট্রাক, ট্রাক্টর এবং ডাম্পার কোটাসুর-রামনগর সড়কের উপর দিয়ে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। যানবাহনের বেপরোয়া গতির ফলে ওই এলাকায় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। কয়েকদিন আগেই একটি ডাম্পারকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো বাইকের ধাক্কায় আহত হন স্থানীয় দাদপুর গ্রামের এক বৃদ্ধাকে। মাস দু’য়েক আগে বালি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় পলশা গ্রামের এক ব্যক্তির। ওইসময় যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তখন প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা তাই যান নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন এক অভিনব পদক্ষেপ। গড়া হয়েছে ২০ সদস্যের এক বিশেষ কমিটিও।
ঠিক হয়েছে, ওই সড়কের প্রয়াগপুর থেকে ষাটপলশা পর্যন্ত ৪ কিমি জনবহুল রাস্তায় বালি বোঝাই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি একটি নিয়ম চালু করেছেন তাঁরা। বালি ভর্তি করতে যাওয়ার সময় সেই নিয়মের কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে চালকদের। নিয়মটি হলো, বালি নিয়ে ফেরার সময় প্রয়াগপুর থেকে সহকারীকে গাড়ির সামনে ষাটপলশা পর্যন্ত হেঁটে আসতে হবে। জনবহুল এলাকা পার হওয়ার পরে তবেই গাড়িতে উঠতে পারবেন সহকারি।
কেন এই নিয়ম?
ওই যান নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি সুভাষ মণ্ডল জানান, সাধারণ বালি বোঝাই গাড়ির বেপরোয়া গতির জন্যই নিত্য দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কি চালক, কি প্রশাসনকে জানিয়েও সেই গতি রোখা যায়নি। তাই আমাদের এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। খালাসি সামনে হেঁটে যাওয়ায় চালকেরা আর বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে পারছেন না। কমিটির অন্যতম দুই সদস্য মহিমারঞ্জন মণ্ডল, রাজকুমার ঘোষরা জানান, প্রথমদিকে মোড়ে মোড়ে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন মুখে মুখে জেনে যাওয়ার পরে চালকেরা নিজে থেকেই ওই নিয়ম মেনে চলছেন।
মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার ট্রাকচালক রফিক হোসেন, নদীয়ার পলাশির সওকত আলিরা জানিয়েছেন, এক হিসাবে ভালোই। কিছুটা সময় বেশি লাগছে ঠিকই, কিন্তু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যাচ্ছে। আর দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তো হেনস্থা, হয়রানির শেষ থাকে না।
এমন উদ্যোগের কথা শুনে আপ্লুত এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের ওই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রশাসনও যাতে গ্রামবাসীদের পাশে থাকে তা দেখব।’’