সেই মাছ। ক্ষোভে বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য দেওয়া হয়েছিল ৩২ কেজি মাছ। যার একাংশ উদ্ধার হল শিক্ষকদের বসার ঘর থেকে। এই ঘটনায় বুধবার তুলকালাম বাধে বিষ্ণুপুরের কুসুমবনি যমুনাদাস খেমকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মাছ চাষের জন্য ওই স্কুলের একটি পুকুর তিন বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়েছিল স্থানীয় এক ক্লাব। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, বছরে তারা স্কুলকে ১১ হাজার টাকা এবং এক বার ২০ কেজি মাছ দেবে। পরে খুদে পড়ুয়াদের কথা ভেবে ঠিক হয়, বছরে তিন বার মাছ দেওয়া হবে স্কুলকে।
চুক্তি মোতাবেক এ দিন ৩২ কেজি মাছ দেওয়া হয় স্কুলে। এর পরেই অভিযোগ ওঠে, খুব কম ওজনের ৩০০ পিস মাছ রান্নার জন্য দেওয়া হয়েছে। বাকি মাছের হদিস মিলছে না। শোরগোল পড়ে এলাকায়। মাছের সন্ধানে খোঁজাখুঁজি শুরু হয় স্কুল চত্বরে। এমন সময় খবর আসে, স্কুলের স্টাফরুমে একটি বালতিতে রাখা আছে বাকি মাছ। পরে সেখান থেকেই বালতি ভর্তি মাছ উদ্ধার হয়। সেই খবর চাউর হওয়ার পরেই স্কুলের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। কে বা কারা মাছ সরিয়ে রেখেছিল, তাদের খুঁজে বার করার দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা।
ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমার স্কুলে আসতে একটু দেরি হয়েছিল। এসে সব জানতে পারি। তবে শিক্ষকদের বসার ঘরে কে মাছ সরিয়ে রেখেছিল তা আমি জানি না। এ ধরনের কাজ সমর্থন করা যায় না।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যে মাছগুলি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলির ওজন খুব বেশি হলে ২০ গ্রাম। অন্য দিকে, যে মাছগুলি সরিয়ে রাখা হয়েছিল, সেগুলির ওজন অনেক বেশি। ঘটনার জেরে এ দিন স্কুলের সামনে বিক্ষোভ চলে দীর্ঘক্ষণ। উত্তম দাস, মিঠুন গোস্বামীর মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘আমরা বলেছিলাম, মাছ কেটে স্কুলে পৌঁছে দেব। কিন্তু স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি নিজে সে দায়িত্ব নেন। সকলের কাছে ঘটনার দায় স্বীকার না করলে বিক্ষোভ চলবে।”
ঘটনার জেরে বিড়ম্বনায় পড়েন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি দেবীপ্রসাদ মিশ্রের মন্তব্য, “আরও ছাত্রছাত্রী এলে তাদের মাছ ভাজা দেওয়া হবে বলেই কাঁচা মাছ তুলে রাখা হয়েছিল।” তাঁর সংযোজন, “আমিই দাঁড়িয়ে থেকে মাছ কাটিয়েছি। পরে কিছু মাছের পিস সরিয়ে রেখেছিলাম। এতে অন্যায় হয়ে থাকলে আমি তা স্বীকার করে নিচ্ছি।” ঘটনার নিন্দা করেছেন স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ। ক্লাবের সম্পাদক দয়াময় মহন্ত বলেন, “শিক্ষকেরা চাইলে আরও মাছ দিতাম। কিন্তু এ ভাবে পড়ুয়াদের মাছ সরিয়ে রাখার অর্থ কী?”বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বিক্ষোভ চলাকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষ মাছের দাম মিটিয়ে দিয়ে রফা করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তাঁরা রাজি হননি।
ঘটনা প্রসঙ্গে মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “স্থানীয় মানুষ ভালবেসে স্কুলের জন্য কিছু করতেই পারেন। তবে বাচ্চাদের খাবার সরিয়ে রাখার ঘটনা যদি সত্য হয়, বলতে হবে তা অমানবিক। খোঁজ নিয়ে দেখছি কী হয়েছে।”