প্রতীকী ছবি।
দলের জেলা সভাপতি ও রানিবাঁধের বিধায়ক সম্পর্কে খাতড়ার নেতা জয়ন্ত মিত্রের মন্তব্যের ভিডিয়োকে (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ঘিরে অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা ও রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে জয়ন্তবাবুকে বলতে শোনা গিয়েছে—‘‘ছাত্র হোক, যুব হোক প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যাঁরা রাস্তাঘাটে পার্টি করছেন, তাদের যোগ্য মূল্যায়ন হচ্ছে না। পার্টিতে দালাল ঢুকে পড়েছে। তাঁরা কাজের লোককে সরিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। যাতে দলটা কিছুটা কমজোরি হয়ে যায়।’’
ভিডিয়োতে জয়ন্তবাবুকে রানিবাঁধের বিধায়কের নাম করে অভিযোগ করতে শোনা গিয়েছে যে তিনি স্বামীর রোজগারের চিন্তায় সব নীতি-আদর্শ বাদ দিয়েছেন। এমনকি, খাতড়ার মানুষকে চাকরি না দিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি করেছেন। পাশাপাশি, শ্যামলবাবু জেলায় দলের দায়িত্ব পাওয়ার পরে যাঁরা দল করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা ‘মর্যাদা হারিয়েছেন’, এমনও অভিযোগ ওই নেতার।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, শুক্রবার জয়ন্তবাবু খাতড়ায় দলীয় কর্মীদের মোবাইল ক্যামেরার সামনে এই মন্তব্য করেন। ভিডিয়োটি হোয়্যাটস অ্যাপে কার্যত ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। তা নজরে আসে জেলা নেতৃত্বের অনেকের।
শনিবার সব অভিযোগ উড়িয়ে জ্যোৎস্নাদেবীর পাল্টা চ্যালেঞ্জ, ‘‘আমার কোথায় সম্পত্তি আছে, তা দলীয় ভাবে তদন্ত করা হোক। আমি জয়ন্তবাবুর ওই মন্তব্যের ভিডিয়ো তুলে ধরে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” শ্যামলবাবুর প্রতিক্রিয়া, “জয়ন্তবাবুর মন্তব্যের কথা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। এ নিয়ে আর কিছু বলব না।’’ আর জয়ন্তবাবু বলছেন, ‘‘যা বলার ভিডিয়োতে বলেছি। রাজ্য নেতৃত্ব যদি এ নিয়ে আমার কাছে কিছু জানতে চান, সেখানেই যা বলার বলব।”
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্তবাবু-সহ ২০ জনকে জেলার সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে। জেলায় পদ পাওয়ার পরেও জয়ন্তবাবু কেন ক্ষুব্ধ?
দলের অন্দরের খবর, জ্যোৎস্নাদেবীর সঙ্গে জয়ন্তবাবুর ‘মনোমালিন্য’ দীর্ঘদিনের। এ বার জ্যোৎস্নাদেবীর অনুগামী বলে পরিচিত হিড়বাঁধ ও খাতড়ার ব্লক সভাপতিদের বদল করা হয়নি। অন্য দিকে, রানিবাঁধের ব্লক সভাপতি করা হয়েছে জ্যোৎস্নাদেবীরই আর এক অনুগামীকে। তাতেই ক্ষুব্ধ জয়ন্তবাবু। যদিও তিনি এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। শ্যামলবাবুর দাবি, “দলে কে, কী দায়িত্ব পাবেন, সেটা রাজ্য নেতৃত্বই ঠিক করেছেন।”
ভিডিয়োটি নজরে এসেছে বিরোধীদেরও। বাঁকুড়ার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি নেতা সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “তৃণমূলের বিদায় ঘণ্টা যে বেজে গিয়েছে, তা এই সব ঘটনা আরও ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমাদের আর কিছু বলতেই হবে না, ওদের দলের এক নেতাই অন্য নেতার পর্দা ফাঁস করার জন্য মুখিয়ে আছেন।” শ্যামলবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের দলে কেউ শৃঙ্খলা ভাঙলে মেনে নেওয়া হয় না। বিজেপি কী বলল, কিছু আসে-যায় না।’’