‘জলই জীবন। তাই অপচয় একেবারেই নয়।’
— গত দু’মাস ধরে বীরভূমের ৫২০টি গ্রাম ঘুরে স্থানীয় মানুষকে এ কথাই বুঝিয়েছেন ৪০ জন প্রশিক্ষিত ‘জলদূত’। শুধু সরকারি সাহায্যের জন্য হাত গুটিয়ে থাকা নয়, প্রয়োজন হলে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সমস্যার সমাধান করারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। তেমনটা না হলে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করেছেন।
নাবার্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা দেশে খরাপ্রবণ এলাকা বা যে এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে সেগুলির প্রকৃত চিত্র কী— প্রশিক্ষিত জলদূতদের মাধ্যমে তৃণমূল স্তর থেকে সেই ছবি তুলে আনতে একটি সমীক্ষার কাজে হাত দিয়েছিল নাবার্ড। সেই সমীক্ষায় দেশের প্রায় ১ লক্ষ গ্রামের মধ্যে এই জেলার ১২টি খরাপ্রবণ ব্লকের পাঁচশো গ্রাম রয়েছে। মে মাসে ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কাজে নামেন তাঁরাই। শুধু সচেতনতা তৈরি নয়, কী করলে গ্রামে জলের অভাব মিটিয়ে, সংরক্ষণ বাড়ানো যায়, জলদূতেরা তার ব্যাখ্যা ও ম্যাপ তৈরি করেছেন।
জল সংরক্ষণ নিয়ে সমীক্ষা থেকে কী ছবি উঠে এল, বুধবার সিউড়ির একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করেন জলদূতেরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাবার্ডের মহা প্রবন্ধক অমলকুমার রায়বর্মন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রঞ্জন কুমার ঝা, সেন্টার ফর এনভায়রমেন্ট এডুকেশনের পক্ষে রিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, উপ-অধিকার্তা (উদ্যান পালন) সজলেন্দু শীট, ভূমি ও জল সংরক্ষণ বিভাগের আধিকারিক, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা।
এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তাঁরাও মানছেন, আগামী দিনে জলসঙ্কট চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছানোর আগেই অনিবার্য ভাবে মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। মহা প্রবন্ধক অমল কুমার রায়বর্মন বলছেন, ‘‘মানুষ, জল, জমি ও মাটি নিয়ে কাজ করে নাবার্ড। সেটা করতে গিয়েই গত কয়েক বছরে জলের সঙ্কট প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছিল। তাই এমন সমীক্ষা।’’
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ভূগর্ভস্থ জলের স্তর যেমন নামছে, তেমনই ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক বা ফ্লোরাইডের মতো ক্ষতিকারক উপাদান মানুষের ক্ষতি করছে। এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমিয়ে। তাতে বাড়াতে হবে বৃষ্টির জলের সঞ্চয়। একমাত্র এ ভাবেই আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য জলের জোগান সুনিশ্চিত করতে পারি। গ্রামের লোকজন এ ব্যাপারে এগিয়ে এলে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সাহায্য, ব্যাঙ্ক ঋণও মিলতে পারে। নাবার্ডের কর্তাদের তরফে গ্রামের মানুষকে পুকুর, নালা সংস্কারের মতো কাজে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশার কথা, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক’টি গ্রামে এ কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামের মানুষ। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।