প্রতীকী ছবি।
দু’জনের কারও মাথায় ছিল না হেলমেট, তার উপরে ছিল গতি। এর মাঝে রাতের বেলায় উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাক্টরের আলোয় ধাঁধিয়ে গিয়েছিল চোখ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে ধাক্কা মারেন সাদ্দাম মোমিন (২০) ও মতিউর মোমিন (২২)। স্থানীয়েরা দু’জনকেই দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে মুরারই হাসপাতলে ভর্তি করান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার রাতেই দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জনের মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত আটটার সময় মুরারই থানার বালিয়াড়া-মলয়পুর রাস্তায়। দু’জনেই পেশায় রাজমিস্ত্রি। বাড়ি বালিয়াড়া মোমিন পাড়ায়। এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে দুই বন্ধু মলয়পুরে একটি পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দু’জনের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। মোটরবাইকের
গতিও ছিল যথেষ্ট। বৃহস্পতিবার ময়না-তদন্তের পরে পুলিশ দেহ দুটি পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
সাদ্দাম, মতিউর দিল্লিতে কাজ করতেন। আবাস যোজনায় ঘর করার জন্য গ্রামে এসেছিলেন। সাদ্দামের পরিবার তাঁর উপার্জনের উপরে নির্ভরশীল ছিল। দীর্ঘ দিন আগে বাবার মৃত্যু হয়। বাড়িতে আছেন মা ও ১২ বছরের ভাই। বাবার মৃত্যুর পরে সংসারের দায়িত্ব সাদ্দামই নিয়েছিলেন। বিয়েও করেন। অন্য দিকে, মতিউরের বাবা-মা ছোটছেলের কাছেই থাকতেন। দুই বন্ধুর মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমেছে।
সাদ্দামের মা মনিজা বেওয়া বলছেন, ‘‘বাড়তি রোজগারের আশায় দিল্লিতে কাজ করত। বাড়ি তৈরির জন্য গ্রামে এসেছিল।
হেলমেট পরে থাকলে আজ বোধহয় বেঁচে যেত। এখন কেমন করে সংসার চালাব জানি না।’’ কাবাতুল্লা শেখের মতো গ্রামের বাসিন্দাদের আর্জি, মোটরবাইক জোরে চালালে পুলিশ ব্যবস্থা নিক। হেলমেট না-থাকলেও যেন দেখা হয়। বস্তুত, ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ’ নিয়ে
জেলার নানা প্রান্তে নানা সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে অভিযান, প্রচার চালানো হয়। তাতেও সার্বিক সচেতনতা যে তৈরি হয়নি, এই দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ।