জোগানের অভাব

শিবির করেও বিলি হল না কার্ড

পঞ্চায়েতের ৩৫টি গ্রামের মধ্যে ১৪টি গ্রাম আদিবাসী। ওই পরিবারগুলি দীর্ঘদিন থেকে তাদের শংসাপত্র, রেশন কার্ড দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে। কিন্তু নানান জটিলতায় ওই সব আদিবাসী পরিবার কোনও রকম কার্ড পায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:৪৭
Share:

রেশন কার্ড ও শংসাপত্র দেওয়ার জন্য ভাটিনা গ্রামে শিবির। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েতের ৩৫টি গ্রামের মধ্যে ১৪টি গ্রাম আদিবাসী। ওই পরিবারগুলি দীর্ঘদিন থেকে তাদের শংসাপত্র, রেশন কার্ড দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে। কিন্তু নানান জটিলতায় ওই সব আদিবাসী পরিবার কোনও রকম কার্ড পায়নি। সে জন্য শুক্রবার রামপুরহাট থানার বনহাট পঞ্চায়েতের ভাটিনা মৌজায় শিবির করে বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবারকে শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করল প্রশাসন। এত কিছু করেও কার্ড বিলি করা সম্ভব হল না।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরহাট মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস জানান, দীর্ঘদিন থেকে এলাকার আদিবাসীরা তাদের শংসাপত্র পাচ্ছিলেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত কাগজপ্রত্র না থাকার জন্য অনেকেই শংসাপত্র পায়নি। সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে এ দিন ক্যাম্পের মাধ্যমে বেশ কিছু পরিবারের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার অনেক আদিবাসী পুরুষ মহিলা পাথর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকের কাজ করেন। শ্রম দফতরের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধাগুলি কী কী আছে ওই সব পরিবার সে সম্পর্কে কিছুই জানে না। পেনশন, অসমর্থ, অক্ষম ব্যক্তির জন্য পেনশন, শিক্ষার জন্য অনুদান-সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাগুলি যাতে তারা পায় সে জন্য তাঁদের নাম শ্রম দফতরের খাতায় তোলা হয়েছে।’’

কিন্তু মানুষের কাছে সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে মহকুমাশাসক চার দিন আগে থেকে ক্যাম্প করার দায়িত্ব বনহাট পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের বুবাই মুর্মুর উপর দিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন বেলা ১১টা বেজে গেলেও প্রধানই উপস্থিত হননি। সে জন্য ধমকও খেয়েছেন প্রধান। শিবির চলাকালীন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ রেশন কার্ড প্রদানের জন্য আবেদন জানাতে থাকেন। কিন্তু ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু হবে, সে জন্য রেশন কার্ড বিলি বন্ধ আছে। খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের রামপুরহাট মহকুমা কন্ট্রোলার সুচন্দা পাল বলেন, ‘‘নতুন রেশন কার্ডের যোগান দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ আছে। এর ফলে আমাদের কাছেও রেশন কার্ড মজুত নেই। তবে নতুন রেশন কার্ডের জন্য আমাদের কাছে এই শিবির থেকে আবেদনকারী ৫০ জনের তালিকা নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পর নতুন কার্ড দেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, নতুন রেশন কার্ড না পেয়ে ভাটিনা, হরিনাথপুর-সহ অন্যান্য জায়গা থেকে আসা বেশ কয়েকজন আদিবাসী পুরুষ মহিলারা ফিরে যান।

Advertisement

তবে রামপুরহাট থানার আরাবুনি থেকে মায়ের নতুন রেশন কার্ড নেওয়ার জন্য এসেছিলেন মাইসুরি হাঁসদা। একই ভাবে হরিনাথপুর থেকে ছেলের জন্য এসেছিলেন পার্বতী মুর্মু-সহ আরও অনেকে। কিন্তু রেশন কার্ড না পেয়ে তাঁরা শুধু তালিকায় নাম নথিভুক্ত করে চলে গিয়েছেন। আবার দীর্ঘদিন পরে শংসাপত্র পাওয়ার আশায় অনেককে দেখা যায়, রোদের মধ্যে ক্যাম্প লাগোয়া বাঁশ ও গাছের ছায়ায় আবেদনপত্র পূরণ করতে। রামপুরহাট থানার হরিনাথপুর গ্রামের দিনমজুর বাবলু সোরেন, দেবু টুডু, স্কুল পড়ুয়া হেমন্ত কিস্কুদের কথায়, ‘‘শংসাপত্রের জন্য দু’তিন বছর থেকে ঘুরছি। কিন্ত কাগজপত্র নিয়ে নানান জটিলতা ছাড়াও প্রশাসনিক গড়িমসিতে শংসাপত্র পাওয়া যায়নি। আশা করি এ বার পেয়ে যাব।’’

তবে এ দিন শংসাপত্র দেওয়ার পাশাপাশি ভাটিনা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিবিরে রামপুরহাট মহকুমা সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ রায়চৌধুরী এবং রামপুরহাট হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসক সঞ্জীব সোম রক্ত পরীক্ষা করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement