প্রতীকী ছবি।
২ জানুয়ারি করোনা টিকার ড্রাই রান বা মহড়া হয়েছিল রাজ্যের তিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দ্বিতীয় ধাপে ৮ জানুয়ারি রাজ্যের প্রতিটি স্বাস্থ্য জেলার সঙ্গে বীরভূম ও রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় ড্রাই রান বা মহড়া টিকাকরণ কর্মসূচি পালিত হতে চলেছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ৫ জানুয়ারি এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংশিষ্ট আধিকারিকদের চিঠি পাঠিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন ডিরেক্টর বন্দনা গুরনানি। তার পরই জেলার দুই স্বাস্থ্য জেলায় তৎপরতা শুরু হয়েছে। কী ভাবে প্রস্তত থাকতে হবে তা জানতে বুধবারই রাজ্য স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ দেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার তিনটি জায়গায় চলবে মহড়া টিকাকরণ। সেই তালিকায় সিউড়ি জেলা হাসপাতাল, শহর কেন্দ্রিক বোলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ এলাকায় সিউড়ি ১ ব্লকের বড়চাতুরি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অন্য দিকে, তুলনায় ছোট রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় কোভিড টিকাকরণের ড্রাই রান আয়োজিত হবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তৈরি বিশেষজ্ঞ প্যানেল দুটি টিকাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। প্রথমটি হল, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ টিকা। ভারতে যে টিকা তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। দ্বিতীয়টি হল, ভারত বায়োটেক আইসিএমআর-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে তৈরি দেশজ টিকা কোভ্যাক্সিন।
এত বড় কর্মযজ্ঞে ঝাঁপাবার আগে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ফাঁক না থাকে, সরকারি যন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছে কিনা সেটা দেখে নেওয়া জরুরি। সেই জন্যই প্রথম দফায় দেশের নির্দিষ্ট সংখ্যক নির্বাচিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই ড্রাই রান কর্মসূচি পালিত হয়। বিশেষ একটি সফটওয়্যার অ্যাপের মাধ্যমে গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে। ফল অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু, দেশের অন্য প্রান্তেও প্রস্ততিতে কোথাও খামতি না থাকে বা থেকে থাকলেও সেটা টিকাকরণ কর্মসূচি শুরুর আগেই মিটিয়ে ফেলা যায়, সেই লক্ষ্যে দেশ জুড়ে প্রতিটি স্বাস্থ্য জেলায় নির্বাচিত জেলা, মেডিক্যাল কলেজ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফের ওই কর্মসূচি পালনের জন্য বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। নির্দেশ অনুয়ায়ী, স্বাস্থ্য দফতরের তত্ত্বাবধানে গোটা পর্বটি চললেও নজরদারি থাকবে জেলাশাসকের।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের দফায় ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে ‘ডামি’ বা ‘নকল’ টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় শামিল করা হয়েছিল। এ বারও বীরভূমও সেই প্রতিটি ক্ষেত্রে ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়েই মহড়া টিকাকরণ হবে। ডেপুটিসিএমওএইচ ৩ জয়ন্ত শুকুল এবং এসিএমওএইচ প্রহ্লাদ অধিকারীরা জানান, প্রতিটি জায়গায় থাকবেন চার জন ভ্যাকসিনেসন অফিসার ও এক জন ভ্যাকসিনেটর মিলিয়ে পাঁচ জনের দল। কোভিড বিধি ও গাইড লাইন মেনে নকল টিকাকরণ কর্মসূচি হবে। তিনটি আলো-বাতাসযুক্ত ঘরের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রথমটি ওয়েটিং, দ্বিতীয়টি ভ্যাকসিনেশন রুম ও শেষেরটি অবজার্ভেশন রুম। কারণ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কারও কারও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে অ্যাডভার্স ইভেন্টস ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন।
জেলায় প্রথম পর্বে করোনা যোদ্ধা হিসেবে যাঁরা প্রথম সারিতে তাঁদের পরিচয় ইত্যাদি তথ্য ওই সফটওয়্যারে আছে। জেলা জুড়ে দুটি স্বাস্থ্য জেলা এমন সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। তাঁদের মধ্যে থেকেই মহড়া টিকাকরণে ২৫ জনের নাম পাঠানো হবে। টিকা শেষ হলে পরবর্তী ডোজ কবে নিতে হবে, তাও ওই সফটওয়্যার জানিয়ে দেবে। সবটাই রিয়েল টাইম এন্ট্রি হবে। যাঁর যা দায়িত্ব সেটা যথাযথ ভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, মহড়ায় সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ নজরদারি থাকবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের।