ফিরছে চেনা ছবি। নিজস্ব চিত্র।
করোনার ভয়কে সঙ্গী করেই পুজোর ছুটিতে ফের পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠল মুকুটমণিপুর।
বাঁকুড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যটনকেন্দ্রে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১৫টি লজ ও হোটেল রয়েছে। ‘মুকুটমণিপুর হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি সুদীপ সাহু, সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্তের বলেন, ‘‘পুজোর আগে থেকে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত হোটেল-লজ টানা বুকিং করা রয়েছে। অনেক হোটেলে আবার কালীপুজো পর্যন্ত ঘর ফাঁকা নেই। এত দিন পরে, পর্যটকদের ভিড় দেখে স্বস্তি পেলাম।’’ বেসরকারি লজ ও হোটেলের মালিক উত্তম কুম্ভকার, তাপসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘পুজোর মাঝখানে অষ্টমী-নবমী এবং বিজয়া দশমীতেও অনেকে এখানে এসে হোটেল বুক করবেন ভেবেছিলেন। তাঁদের থাকার জায়গা দিতে পারিনি।’’
বৃষ্টিতে এ বার মুকুটমণিপুর জলাধারে ভালই জল জমেছে। পর্যটকেরা নৌকায় ঘুরেছেন। মুকুটমণিপুর উন্নয়ন পর্ষদের নৌকা বিহার সমবায় সমিতির সম্পাদক তারাপদ সিং সর্দার জানান, পুজোর দিনগুলিতে খুব ভাল ব্যবসা হয়েছে তাঁদের।
ভিড় বাড়ায় খুশি হোটেল-লজ মালিক ও নৌকা চালকেরা। কিন্তু মুখে হাসি নেই মুকুটমণিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের। সংগঠনের সম্পাদক বিপুল সাহুর দাবি, ‘‘এখানে প্রায় ৯০টি সরকারি স্টল রয়েছে। করোনা-পরিস্থিতির জন্য মার্চের শেষ থেকে এখানকার সমস্ত ধরনের ব্যবসা মার খেয়েছে। পুজোর এই ক’টা দিন যথেষ্ট ভিড় হয়েছে। কিন্তু দোকানগুলিতে বেচাকেনা মোটেই হয়নি।’’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য পতিতপাবন সাহুর দাবি, পুজোয় রেকর্ড সংখ্যক ভিড় ছিল নবমীর দিন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পুজোর চার-পাঁচ দিনে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচশো টাকার ব্যবসা হয়েছে। একই অবস্থার কথা জানান, জয়ন্ত সাহু নামে আর এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দোকান খোলার আগে প্রতিদিনই জীবাণুনাশক ছড়াতে হচ্ছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে। এ জন্য প্রতিদিনই নির্দিষ্ট খরচ হচ্ছে। পর্যটকদের ভিড় থাকলেও অথচ বেচাকেনা না হওয়ায় মন খারাপ।’’
কেনাকাটা কম হচ্ছে কেন?
পশ্চিম মেদিনীপুরের গোদাপিয়াশাল থেকে সস্ত্রীক বেড়াতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ সামন্ত ও শিখা সামন্ত। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা ঘুরতে বেরিয়ে বলেন, ‘‘এখানকার হোটেল-লজগুলিতে করোনা প্রতিরোধের যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে। তাই লজে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা না থাকলেও বাইরের মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে, দোকানগুলিতে ভিড় এড়িয়ে যতটুকু কেনাকাটা না করলেই নয়, সে ভাবে চলাফেরার চেষ্টা করছি।’’ তবে পর্যটকদের আনাগোনা স্বাভাবিক হলে, বেচাকেনাও বাড়বে বলে আশায় বুক বাঁধছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।