জেলা জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত সবকটি তোরণই হবে এক রকমের।
পুজোয় জনসংযোগ বাড়াতে জেলা জুড়ে শুভেচ্ছা তোরণ বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূল। কেমন হবে সেই তোরণের নকশা, তা তৈরি করে জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের জেলা নেতারা জানিয়েছেন, শারদোৎসবের শুভেচ্ছা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দিতেই এই স্বাগত তোরণ করা হবে। জেলা জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত সবকটি তোরণই হবে এক রকমের।
তৃণমূলের ব্যাখ্যা, পুজোয় বহু মানুষ পথে বেরোবেন। বিশেষত যাঁরা নিয়মিত বেরোন না, তাঁরাও। সহজে জনসংযোগের এটাই আদর্শ সময়। দল সূত্রে খবর, তোরণের নকশা ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুর এলাকায়। নির্দেশও গিয়েছে, জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কমপক্ষে একটি করে এবং ৬টি পুরসভা এলাকায় একাধিক এমন তোরণ তৈরি করা হবে। তার প্রস্তুতি তুঙ্গে। শনিবার, মহালয়ার দিন একযোগে সেগুলির উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘ধর্ম নিজের, উৎসব সকলের। দুর্গাপুজো, দোল, ইদকে তো ধর্মের গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রাখা সম্ভব নয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই আনন্দ করেন। তাই জেলা তৃণমূল মানুষকে শুভেচ্ছা জানাতে তৈরি করেছে শুভেচ্ছা তোরণ।’’
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। পুজোর ক’টা দিন মণ্ডপেই ভিড় জমান মানুষ। সেখানেই গল্প, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। থাকেন বাড়ির মেয়ে-বউরাও। জনসংযোগ বাড়ানোর মস্ত এই ‘প্ল্যাটফর্ম’কে কাজে লাগাতে মরিয়া সব রাজনৈতিক দলই। তবে এ ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপি। দু’পক্ষই ঠিক করেছে, প্রতিটি পুজো মণ্ডপে গিয়ে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলার কাজটি করবেন দলের নেতা-কর্মীরা। থাকবে দলীয় বুকস্টল আর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পোস্টার।
এ সবের মাঝে প্রতিটি পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকায় স্বাগত তোরণ তৈরি করানোর কৌশল নিয়ে বিজেপির থেকে এক কদম এগিয়ে থাকাই যে উদ্দেশ্য, আড়ালে তা মানছেন শাসকদলের নেতারা। মহালয়া থেকে জনবহুল এলাকায় ওই স্বাগত তোরণের মাধ্যমে শারদোৎসবের শুভেচ্ছা জানানোর উদ্দেশ্যই হল, মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া। এর পিছনে অবশ্য কারণ রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে জেলার দু’টি আসন তৃণমূল জিতলেও কার্যত তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। নিজেদের ভোট বাড়িয়ে নেওয়াই নয়, বিজেপি হাওয়ায় একাধিক বিধানসভা এলাকার মতো পুর-এলাকাতেও রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার প্রশ্নে যে বিষয়গুলি উঠে এসেছিল, তার পিছনে আম জনতার নানা অভাব অভিযোগের পাশাপাশি ছিল দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এলাকার মানুষের জনসংযোগের অভাব।
ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের টিম ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের অভাব অভিযোগ দূর করে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের জনসংযোগ বাড়ানোয় গুরুত্ব দিয়েছে। জেলার প্রতিটি এলাকায় দুর্গাপুজোয় স্বাগত তোরণ করার পিছনেও সেই জনসংযোগ মজবুত করার বার্তা। জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘দুর্গাপুজোয় শুভেচ্ছা জানানো হয়। এর মধ্যে নতুন কিছু নেই। তবে প্রতিবারই এলাকার নেতা কর্মীরা তাঁদের মতো করে ফ্লেক্স বানিয়ে নেন। থাকে তাঁদের ছবিও।’’ তবে, তিনি মানছেন, রাজ্যে বিজেপি নিজেদের সংগঠন মজবুত করায় জনসংযোগের বিষয়ে সক্রিয় হতে হয়েছে তৃণমূলকেও। সেই লক্ষ্যেই তোরণ করা ও দলনেত্রী ছাড়া অন্য কারও ছবি না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
অভিজিৎবাবুর মন্তব্য, ‘‘এই উৎসবকে কেউ সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে যাতে কলুষিত করতে না পারে, সেই জন্য সম্প্রীতি রক্ষার বার্তাও দেওয়া হবে এই তোরণের মাধ্যমে।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক বিজেপি নয়, তৃণমূলই। মানুষ সেটা জানেন। জনসংযোগ আমরাও করব। তবে ও-ভাবে নয়।’’ তিনি জানান, পুজোর সময় প্রতিটি বুথ এলাকায় জনসংযোগ বাড়ানোর কাজে থাকবেন দলের নেতা-কর্মীরা। যত বেশি সম্ভব
পুজো কমিটির সঙ্গে যোগযোগ রাখার চেষ্টা হবে। লক্ষ্য রাখা হবে উৎসবের সময় মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়।