পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল দেখে জেলায় সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই প্রেক্ষিতেই জেলার পাঁচ ব্লকে সভাপতিদের বদলে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। মূলত পুরুলিয়ায় দলের পর্যবেক্ষক তথা যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
দল সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর ১, রঘুনাথপুর ২ ব্লক, সাঁতুড়ি, পাড়া এবং বলরামপুরে ব্লক সভাপতিদের বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শুধু ওই পাঁচটি ব্লকই নয়, ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি ব্লকের সভাপতি বদল করার ভাবনা রয়েছে দলীয় নেতৃত্বের। অবশ্য কোন ব্লক, সেই বিষয়টি এখনই খোলসা করতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। দলের একটি সূত্রের খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র থাকায় যে ব্লকগুলিতে পঞ্চায়েতে আশা মতো ফল হয়নি, সেখানে সভাপতি বদলের কথা ভাবা হচ্ছে।
শান্তিরাম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলের পর্যালোচনা করতে শনিবার পুরুলিয়াতে বৈঠক করেছেন দলের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই আপাতত পাঁচটি ব্লকের সভাপতিদের বদলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। আমরা সেই মতো দলীয় স্তরে প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”
পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে জেলার কুড়িটি ব্লকেই সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে রদবদলের চিন্তা তাঁরা শুরু করেছেন বলে জানান শান্তিরাম। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের জনপ্রতিনিধিদের ও দলের নেতাদের একাংশের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, জীবনযাত্রার মান দেখে মানুষজন রুষ্ট হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এই বিষয়টার বদল দরকার বলে কুড়িটি ব্লকেই সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে আগামী দিনে রদবদল প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রঘুনাথপুর মহকুমার চারটি ব্লক ও জঙ্গলমহলের বলরামপুরে ভরাডুবি হয়েছে শাসকদলের। রঘুনাথপুরের সাঁতুড়ি আর পাড়ায় জেলা পরিষদের আসনগুলি শাসকদল ধরে রাখতে পেরেছে, তবে হারিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি ও অনেক পঞ্চায়েত। রঘুনাথপুর ১ ব্লকে জেলা পরিষদের দু’টি আসনের মধ্যে একটিতে পুনর্গণনায় জিতেছে তৃণমূল। সেখানেও হার হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি আর বেশ কিছু পঞ্চায়েতে।
সব চেয়ে খারাপ অবস্থা রঘুনাথপুর ২ ব্লক ও বলরামপুরে। এই দুই জায়গায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে অনেক গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদের সমস্ত আসনে হেরেছে তৃণমূল। সূত্রের খবর, পর্যালোচনা বৈঠকে এই ব্লকগুলির নাম উল্লেখ করে ব্লক নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করেন অভিষেক। ব্লক সভাপতিদের বদলে ফেলার নির্দেশ দেন।
তবে ঘটনা হল, ব্লকগুলির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমীকরণ সামলে সর্বসম্মত ও সর্বজনগ্রাহ্য মুখ হিসাবে কাকে সভাপতি করা হবে সেই বিষয়টি স্থির করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে দলের জেলা নেতৃত্বকে। ব্লক সভাপতিকে ঘিরে সমস্ত ব্লকেই অনুগামী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। ফলে সভাপতিকে বদলে ফেললে এই অবস্থায় দলের কর্মী সমর্থকদের একাংশ দলের কাজে অনীহা প্রকাশ করতে শুরু করবেন বলে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আবার নতুন মুখ হিসাবে অন্য নেতাকে ব্লকের দায়িত্ব দিলে তাঁর নেতৃত্ব দলের কর্মী সমর্থকদের সবাই মেনে নেবেন কি না সেই বিষয়েও সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতে ফল খারাপ হওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের আচরণ আর জীবনযাত্রা যেমন দায়ী, তেমনই দায়ী দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। ফলে ব্লক সভাপতি বদল করে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে এই বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমীরকরণটা মাথায় রাখা দরকার।’’