প্রচার: মহামিছিলের আগের দিন। সিউড়ির রাজপথে। নিজস্ব চিত্র
রামপুরহাটে মহামিছিল ছিল রবিবার। আজ, সোমবার শাসক দলের মহামিছিল হবে জেলাসদর সিউড়িতে। তৃণমূলের দাবি, ৭০-৭৫ হাজার মানুষ তাতে যোগ দেবেন।
এ দিকে, তৃণমূলের ওই মিছিল ঘিরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
তৃণমূল ও জেলা বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, মিছিলের জন্য নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রুটের শ’দেড়েক বেসরকারি বাস, অনেক ছোট গাড়ি, ট্রাক্টর, টোটো। কোনও কোনও বাস তোলা হয়েছে মৌখিক ‘নির্দেশে’, কয়েকটি বাসে স্টিকার সেঁটে দেওয়া হয়েছে। এ সবের জেরে সোমবার দুপুরে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ও যানবাহনের অভাবে ভোগান্তি নিশ্চিত বলে মনে করছে আম-জনতা।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল ৩টে নাগাদ সিউড়ি শহরের চাঁদমারি মাঠ থেকে শুরু হবে মহামিছিল। মূল রাস্তায় বাসস্ট্যান্ড, প্রশাসন ভবন, জেলা তৃণমূল কার্যালয় হয়ে মসজিদ মোড় হয়ে জেলা স্কুলের মাঠে তা শেষ হবে। সিউড়ি মহকুমার প্রতিটি ব্লকের নেতৃত্বের কাছে নির্দেশ গিয়েছে, যত বেশি সংখ্যক জমায়েত করতে হবে। মিছিলে থাকার কথা দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলার দুই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, একাধিক বিধায়ক, জেলার নেতাদের।
দলীয় সূত্রে খবর, প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে সে ভাবেই। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রতের কাট-আউট, ফেস্টুনে ভরেছে জেলাসদর। সিউড়ি ১ ও ২, রাজনগর, মহম্মদবাজার, সাঁইথিয়া, দুবরাজপুর ও খয়রাশোলের প্রতিটি অঞ্চল থেকে লোক নিয়ে আসার প্রস্তুতিও চূড়ান্ত।
সিউড়ি ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি স্বর্ণময় সিংহ জানান, ছোট গাড়ি, টোটো, মোটরবাইক তো থাকছেই, পাশাপাশি ২১টি বাস নেওয়া হয়েছে। কমপক্ষে ৭ হাজার লোক নিয়ে মিছিলে যাওয়ার লক্ষ্য তাঁর। ‘‘রাজনগর ব্লক থেকে হাজার তিনেক কর্মী সমর্থক যাবেন। তাই বাস নেওয়া হয়েছে ২৪টি’’— এ কথা বলছেন স্থানীয় নেতা সুকুমার সাধু। দুবরাজপুর ব্লকে ৩৫টি, খয়রাশোলে ৩০টি, মহম্মদবাজারে ৩৫টি বাস নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের দলীয় সভাপতি ভোলানাথ মিত্র, দীপক ঘোষ ও তাপস সিংহ। সকলেরই লক্ষ্য কমবেশি ৫ হাজার করে লোক নিয়ে মহামিছিলে যাওয়ার। জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়ার আমোদপুর থেকে ১৫টি বাস সিউড়িতে আসবে। যদিও সিউড়ি ২ ব্লকের সভাপতি নরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘আমাদের ব্লকে দু’একটি বাস যাবে। বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থক যাবেন ছোট গাড়ি, ট্রাক্টরে।’’ জনতার ভয় সেখানেই। প্রতি দিন নানা প্রয়োজনে যাঁদের জেলাসদরে আসতে হয় তাঁদের অনেকে বলছেন, ‘‘এত বাস তোলা হলে পরিবহণ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন মানুষ।’’ একই বক্তব্য বিরোধী শিবিরেরও।
এ নিয়ে কী বলছে তৃণমূল? প্রকাশ্যে নেতারা বলছেন, ‘‘বাস তোলা হলেও সকালে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ তবে আড়ালে তাঁরা মানছেন, সোমবার ১১টার পরেই কার্যত বনধের চেহারা নেবে শহর। এ নিয়ে একমত নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও।
প্রশ্ন উঠেছে, তারাপীঠ, রামপুরহাটের পরে ফের কেন মহামিছিল? জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য— ‘লোকসভা ভোটের আগে দলের কর্মীদের মনোবল আরও বাড়াতেই পর পর মহামিছিল।’ তৃণমূলের একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ তারপীঠ ঘুরের যাওয়ার পরে পাল্টা মহামিছিল করে তেমন জবাব বিপক্ষকে দেওয়া যায়নি। তাই ফের পথে নামছে তৃণমূল।
বিজেপির অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে ক্ষমতার জোরে ৮৩ শতাংশ আসনে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি শাসক দল। তার পরেও বিজেপি ভোটে ভাল ফল করেছে। মানুষ তাদের থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে টের পেয়েই এ ভাবে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের কটাক্ষ, ‘‘এ ভাবে শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে যত সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় ফেলবে শাসক দল, ততই পিছিয়ে পড়বে।’’