ছবি: সংগৃহীত।
নবীন এবং প্রবীণের সামঞ্জস্য রেখেই বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক পদাধিকারীদের তালিকা প্রকাশিত হল। বৃহস্পতিবার জেলা তৃণমূল ভবনে দলীয় নেতৃত্ব ওই তালিকা প্রকাশ করেন। জেলার রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে পদ নিয়ে যাতে দলের অন্দরে নতুন করে ‘দ্বন্দ্ব’ মাথাচাড়া না দেয় সে কথা মাথায় রেখে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, ব্লক স্তরে যেখানে বদল হয়েছে, সেখানে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের দায়িত্ব দেওয়াই শীর্ষ নেতৃত্বের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, “১৩৬ জনের জেলা কমিটি ছিল। বয়সের জন্য ও ব্লকে দায়িত্ব পাওয়ায় মোট ছ’জনকে জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ১৩০ জনের জেলা কমিটিতে ২১টি নতুন মুখ উঠে এসেছে।’’ তিনি জানান, জেলার মোট ১৩টি ব্লকের সভাপতি বদল হয়েছে। জয়পুর ও ইন্দাস ব্লকে সভাপতি ছিল না। সেখানে নতুন সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে সবাই একমত হয়েছেন। এখন আমাদের লক্ষ্য, আগামী বিধানসভা ভোটে ভাল ফল করা।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০০৬ সাল থেকে শালতোড়া ব্লকের দায়িত্বে থাকা কালীপদ রায়কে সরিয়ে তাঁকে জেলা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে বিষ্ণুপুর ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে জেলা সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। রাইপুরের দীর্ঘদিনের তৃণমূল নেতা জগবন্ধু মাহাতোকে ফের সেখানে ব্লক সভাপতির দায়িত্বে আনা হয়েছে। গঙ্গাজলঘাটি ব্লক তৃণমূল সভাপতির দায়িত্বে দীর্ঘদিন ধরে থাকা প্রদীপ চক্রবর্তীকে জেলা সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় গঙ্গাজলঘাটি ব্লক তৃণমূল সভাপতি করা হয়েছে ইন্দ্রজিৎ কর্মকারকে।
কোতুলপুরের ব্লক সভাপতি প্রবীর গড়াই ও জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শ্যামলবাবুর মনোমালিন্যের ঘটনা বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। সাংগঠনিক রদবদলে প্রবীরবাবুকে কোতুলপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আনা হয়েছে। প্রবীরবাবু এ দিন বলেন, “জেলা সভাপতির সুপারিশেই আমাকে ব্লক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি ওই ব্লকে অনেক কাজ করেছি। জেলায় কাজ করার সুযোগ পেলে নিশ্চয় করব।” শ্যামলবাবুর দাবি, রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই সমস্ত পরিবর্তন হয়েছে। পাত্রসায়রের ব্লক তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম সিংহকে সরিয়ে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক সময়ে তাঁরই বিরোধী হিসেবে পরিচিত পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “আমি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে রয়েছি। প্রশাসনিক ওই পদে আরও বেশি করে মন দেওয়ার সুযোগ পাব।” দিলীপবাবু বলেন, “দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।”
বদল হয়েছে জেলার তিন শহরের সভাপতি পদেও। বাঁকুড়া শহরের তৃণমূল সভাপতি পদে অনেক দিন ধরে কেউ ছিলেন না। ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুভাশিস মিশ্রকে। বিষ্ণুপুর শহর তৃণমূলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক জয়মাল্য ঘরকে। সোনামুখী শহর তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তপনজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়কে।