রঘুনাথপুর ২

সব পঞ্চায়েত সমিতির দখল পেল তৃণমূল

জল্পনাটা চলছিল বিধানসভা নির্বাচনের ফল গণনার পর থেকেই। আর সেই জল্পনা সত্যি করে তৃণমূলে যোগ দিলেন রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সভাপতি মনীষা ঘোষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫১
Share:

জল্পনাটা চলছিল বিধানসভা নির্বাচনের ফল গণনার পর থেকেই। আর সেই জল্পনা সত্যি করে তৃণমূলে যোগ দিলেন রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সভাপতি মনীষা ঘোষ। ফলে রঘুনাথপুর মহকুমার যে একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএমের দখলে ছিল এ বার তার দখল নিল শাসকদল। এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ওই ব্লকেরই ব্লক সদর চেলিয়ামা পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান জগন্নাথ ধীবর। ফলে ওই পঞ্চায়েত দখলে এগিয়ে গেল তৃণমূল।

Advertisement

একইদিনে দুই নেতা-নেত্রীর দলবদলের ঘটনায় রঘুনাথপুর ২ ব্লকে জোর ধাক্কা খেল সিপিএম। এমনই মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। ঘটনা হল পর পর দু’বার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দায়িত্ব সামলানো মনীষাদেবী তৃণমূলে যাওয়াতে দীর্ঘ চার দশক পরে ওই পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হল সিপিএমের। একইভাবে চেলিয়ামা পঞ্চায়েতের প্রধান জগন্নাথবাবু সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েতের দখল পেতে চলল শাসকদল।

পাড়া বিধানসভায় বড় ব্যবধানে তৃণমূল জয় পাওয়ার পর থেকেই ওই বিধানসভায় সিপিএমের একদা শক্তি ঘাঁটি রঘুনাথপুর ২ ব্লকে দলে ভাঙন ধরতে শুরু করেছে। সম্প্রতি চার দশক ধরে থাকা মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে ক্ষমতা হারিয়েছে সিপিএম। তার রেশ কাটার আগেই জোড়া ধাক্কা। শুক্রবার পুরুলিয়া শহরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শাসকদলে যোগ দেন মনীষাদেবী ও জগন্নাথ ধীবর। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। ছিলেন পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউরিও। শান্তিরামবাবুর কাছে লেখা চিঠিতে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পঞ্চায়েত প্রধান দু’জনেই জানিয়েছেন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনে রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে পাঁচটি তৃণমূলের দখলে এলেও ব্যতিক্রম ছিল রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি। এখানে ১৬টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল ন’টি আসন। বাকি সাতটিতে জিতেছেল তৃণমূল। শাসকদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই এই পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হয়েছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই এলাকার রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে শুরু করে।

বিশেষ করে পাড়া বিধানসভায় বড় মার্জিনে তৃণমূলের প্রার্থী উমাপদ বাউরি পুনরায় জেতার পর থেকেই সিপিএম থেকে শাসকদলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এই এলাকায়। বিধানসভা নির্বাচনের পরে পঞ্চায়েত সমিতির এক সিপিএম সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। ১৬ সদস্যের সমিতিতে তৃণমূল ও সিপিএমের আসন সংখ্যা সমান হয়ে দাঁড়ায়। এ বার খোদ সমিতির সভাপতি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ওই পঞ্চায়েত সমিতি তাদের দখলে এল বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের পুরুলিয়ার কোর কমিটির সদস্য নবেন্দু মাহালি।

একই ভাবে চেলিয়ামা পঞ্চায়েতের প্রধান জগন্নাথ ধীবর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ওই পঞ্চায়েতে সিপিএম ও তৃণমূলের আসন সংখ্যা সমান হয়ে দাঁড়াল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে চেলিয়ামাতে সিপিএম পেয়েছিল ১০টি আসন। তৃণমূল জিতেছিল আটটিতে। প্রধান জগন্নাথবাবু দলবদল করায় চেলিয়ামায় তৃণমূলের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ন’য়ে। দুই দলই এখন ওই পঞ্চায়েতে সমান। তবে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই পরিস্থিতিতে প্রধান তৃণমূলে আসায় পঞ্চায়েতটি তারাই দখলে পেল।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ রায়ের অভিযোগ, ‘‘সারা রাজ্যেই তৃণমূল বিরোধী সদস্যদের ভয়, প্রলোভন দেখিয়ে ভাঙিয়ে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি দখলের খেলা শুরু করেছে। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা।” শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য সিপিএমের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘বিরোধী দলগুলির মধ্যে যাঁরা উন্নয়নকামী তাঁরা দলে ব্রাত্য হয়ে রয়েছেন। তাঁরাই মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে সামিল হতেই তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement