Suri

পাল্টা সভায় তৃণমূলের অস্ত্র থমকে থাকা বরাদ্দ

রাজ্যের বিজেপির নেতাদের অনুরোধেই কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে বলে সভামঞ্চ থেকে অভিযোগ জানান সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫৯
Share:

সিউড়িতে তৃণমূলের সভায় অভিনেতা তথা বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শুক্রবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিশানা করে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার সিউড়িতে জবাবি সভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলে পাল্টা আক্রমণ করল তৃণমূল। এ দিন সেচ কলোনির মাঠে তৃণমূলের সভায় ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূলের তারকা বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী ও রাজ্যের আর এক মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। ছিলেন জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলার দুই সাংসদ শতাব্দী রায় ও অসিত মাল।

Advertisement

রাজ্যের বিজেপির নেতাদের অনুরোধেই কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে বলে সভামঞ্চ থেকে অভিযোগ জানান সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। পার্থর প্রশ্ন, “১৭ লক্ষ মানুষ একশো দিনের কাজের টাকা পাচ্ছে না কেন?” তাঁর ক্ষোভ, “এই বিষয়ে আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ জন সাংসদকে নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। লজ্জায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী পালিয়ে গেলেন, দেখা করলেন না! ওনার সেক্রেটারি বলেন, বাংলা থেকে বিজেপির নেতারা এসে বলে, টাকাটা দয়া করে ছাড়বেন না। আপনারা যদি গরিবের টাকা ছেড়ে দেন, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর বাংলায় হারানো যাবে না। গরিব মানুষের পেটে লাথি মেরে বিজেপি রাজনীতি করে।”

আবাস যোজনা প্রসঙ্গে বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “১১ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষের যাচাই হয়ে গেছে, রাজ্য টাকা দিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা আটকে রেখেছে। কারণ ওরা চায়না গরিবের মাথার উপর ছাদ হোক। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে প্রত্যেক মানুষের মাথায় ছাদ হবে।”

Advertisement

পঞ্চায়েতের প্রচারে একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনা নিয়ে যে লাগাতার বিজেপিকে আক্রমণ করা হবে, তা কার্যত এ দিনই স্পষ্ট করে দিয়েছে তৃণমূল। পার্থ ছাড়াও বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ জেলার অন্য বিধায়ক ও দুই সাংসদও রাজ্যের পাওনা টাকা আটকে রাখার বিষয়ে সরব হন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তৃণমূলের অস্ত্র হতে চলেছে, তাও স্পষ্ট করে দেন নেতৃত্ব।

পার্থ বলেন, “দেশে যে কয়েকটি প্রকল্প নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, তার প্রত্যেকটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নকল করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিলেন কন্যাশ্রী। তা থেকে নরেন্দ্র মোদী চালু করলেন বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করলেন স্বাস্থ্যসাথী, মোদী করলেন আয়ুষ্মান ভারত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিনামূল্যে রেশন চালু করলেন, তখন মোদীও বিনামূল্যে দেওয়া চালু করলেন।”

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বিঁধে পার্থ বলেন, “অমিত শাহ এখানে সভা করে বলেছেন যারা দুর্নীতিগ্রস্থ, সবাইকে জেলে পুরে দেব। কিন্তু আপনার মঞ্চ আলো করে বসে আছেন, বিরোধী দলনেতা। যাকে সারা ভারতবর্ষ হাতে গুনে টাকা নিতে দেখেছে, যার নাম সিবিআইয়ের ফাইলে আছে। একটা দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষকে পাশে বসিয়ে আপনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছেন।’’

দলের নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সমাজে সব স্তরে ভাল লোক, খারাপ লোক থাকে। এই যে আমরা সবাই তৃণমূল, ববিদা বুকে হাত রেখে বলতে পারবে না, আমরা সবাই ভাল। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেন যারা খারাপ লোক, তাদের আমরা দূরে সরিয়ে দেব। যারা তৃণমূলকে ব্যবহার করে, তৃণমূলকে কলুষিত করেছে, তাদের তাড়াতে তৃণমূল এক সেকেন্ড দ্বিধা দ্বন্দ্ব দেখায়নি।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার জবাব, “যাঁর বিরুদ্ধে ওঁরা অভিযোগ করছেন তিনি ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করেছেন। যারা নিজেরা ডাকাতদের নিয়ে দল করে তাদের মুখে এই সব শোভা পায় না।”

এ দিন বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমকেও আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিজেপির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের মতো দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের ক্ষমতা আছে? তখন হয়ে যাবে তলায় তলায় বোঝাপড়া। যদি একবার আপনারা সেই ভুল করেন আগামী দিনে খেসারত দিতে হবে। বাংলা হয়ে যাবে উত্তরপ্রদেশ। তাই যাদের একবার পরিত্যাগ করেছেন, তাদের আর নেবেন না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূল পারবে না, কারণ ওদের বোঝাপড়া আছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement