সেকেড্ডার পরে অঙ্গারগড়িয়া। দিন কয়েকের ব্যবধানে মহম্মদবাজারের সিপিএম পরিচালিত এই গ্রাম পঞ্চায়েতেও অনাস্থা আনল তৃণমূল। স্থানীয়দের অনেকের মত, অঙ্গারগড়িয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল। কেমন?
এই পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৫, ফরওয়ার্ড ব্লক এক এবং তৃণমূল ৩টি আসন পায়। সিপিএম সূত্রের খবর, অনাস্থা প্রস্তাবের যে কপি প্রধানকে দেওয়া হয়েছে তাতে তিন জনের সই রয়েছে। অন্য দলের কোনও সদস্যের সই নেই। কেবলমাত্র তিন জন সই করার বোঝার উপায় নেই আর কারা কারা ওই অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন করতে পারে। সেক্ষেত্রে তাঁদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে যোগাযোগেরও উপায় নেই!
এ দিকে, বিডিও তারাশঙ্কর ঘোষ জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনতে এক তৃতীয়াংশের সই লাগে। সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনেই অনাস্থা আনা হয়েছে। আগামী শুক্রবার ওই পঞ্চায়েতে ভোটাভুটি নেওয়া হবে।
সিপিএমের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর বিরোধীদের দখলে থাকা একাধিক পঞ্চায়েত দখল নিতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে শাসকদল। গত ৬ তারিখ সেকেড্ডা পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনে শাসক দল। তার ভোটাভুটি হবে আগামী বৃহস্পতিবার। তার মধ্যেই আঙ্গারগড়িয়ায় অনাস্থা আনল তৃণমূল। পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান পদটি মহিলা তফশিলি উপজাতি হিসাবে সংরক্ষিত। গত পঞ্চায়েত ভোটের পরে সেখানে প্রধান হন সিপিএমের রাজ্যধরপুরের সদস্যা মনু টুডু। কিন্তু, অনাস্থা কেন?
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বহু বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও এই পঞ্চায়েত এলাকার কোনও উন্নয়ন হয়নি। মহম্মদবাজারের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের অঙ্গারগড়িয়া অঞ্চলের পর্যবেক্ষক বাপি মিশ্রের দাবি, ‘‘প্রধানের ব্যর্থতায় সমস্ত উন্নয়ন থমকে আছে। উন্নয়নের স্বার্থে বাধ্য হয়ে অনাস্থা আনা হয়েছে।’’ উন্নয়ন নিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ সবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সদ্য হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে। ৯টি সংসদের মধ্যে আমরা গিরিপুর, সুগুনপুর, আসেঙ্গা গৌড়নগর (এই তিনটি তৃণমূলের দখলে রয়েছে) ছাড়াও অঙ্গারগড়িয়া দক্ষিণ, কবিলপুর পূর্ব ও রাজ্যধরপুর— এই ছ’টিতে এগিয়ে আছি। সেই পরিসংখ্যান থেকে এবং এলাকার উন্নয়ন ও মানুষকে সম্মান জানাতে অনাস্থা আনা হয়েছে।’’
কিন্তু, আপনাদের তো তিন জন সদস্য। ভোটাভুটিতে হেরে যাবেন তো? তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘অনাস্থা যখন আনা হয়েছে, তখন ভেবেচিন্তেই আনা হয়েছে।’’ অনাস্থার পক্ষে একাধিক বাম সদস্যের সমর্থন রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাপিও।
অনুন্নয়নের অভিযোগ মানতে চাননি সিপিএম প্রধান মনু কিস্কু। মহম্মদবাজার লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রভাস মালের আবার দাবি, ‘‘উন্নয়ন হয়নি এ কথা মানা যাবে না। তৃণমূল আসলে যে কোনও অজুহাতে পঞ্চায়েত দখল নিতে চাইছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর বিশ্বাস, বিরোধী ছ’জন সদস্য দলবিরোধী কাজ করবেন না। মহম্মদবাজার লোকাল কমিটির সম্পাদক হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখছেন, ‘‘অন্যায় ভাবে পঞ্চায়েতের দখলে নেওয়ার চেষ্টা হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’
বিডিও জানিয়েছেন, অনাস্থা প্রস্তাবের নিয়ম মেনেই শুক্রবার প্রধান-সহ সকল সদস্য-সদস্যাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ওই দিনই হাত তুলে ভোটাভুটি হবে। ভোটাভুটিতে প্রধান হেরে গেলে, নতুন প্রধান গড়তে এক মাস সময় দেওয়া হবে। তত দিন উপপ্রধান প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন।