বিডিসিসি ব্যাঙ্কের নির্বাচনে নালিশ বাম-কর্মীদের মারধর করে মনোনয়নে বাধা

সোমবার থেকে দু’দিন বাঁকুড়া সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে (বিডিসিসিবি) পরিচালন সমিতির নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু ভাবে ওই নির্বাচন হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ১০:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

পুলিশের সামনেই বাম প্রার্থীদের মারধর করে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে (বিডিসিসিবি) পরিচালন সমিতির এই নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়েছে শহরে।

Advertisement

সোমবার থেকে দু’দিন বাঁকুড়া সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে (বিডিসিসিবি) পরিচালন সমিতির নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু ভাবে ওই নির্বাচন হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিরোধীদের। বামফ্রন্টের অভিযোগ, প্রথম দিন থেকেই বাম সমর্থিত প্রার্থীদের ব্যাঙ্কে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাঙ্কে ঢুকতে গেলেই তাঁদের তৃণমূলের কর্মীরা মারধর করে বের করে দিচ্ছে। সোমবারই এ নিয়ে জেলাশাসকে তাঁরা বিষয়টি জানান।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই ব্যাঙ্কের সামনে পুলিশের একটি ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ দিন দুপুর নাগাদ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায়, জেলা কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্র-সহ বিভিন্ন বাম নেতারা তাঁদের চার জন প্রার্থীকে নিয়ে ব্যাঙ্কে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে ঢুকতে যান। সেই সময় তৃণমূলের লোকজন তাঁদের মারধর করে ব্যাঙ্ক থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

মনোরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, ‘‘জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা বিডিসিসিবি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মারধর করা হয়। তাদের ঠেকানোর বদলে উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা নিজেদের বাঁচাতে ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকে পড়েন।’’ ব্যাঙ্কে ঢুকতে না পেরে তাঁরা থানায় ও জেলাশাসকের দফতরে অভিযোগ জানাতে যান।

অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন জয়দীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, “সিপিএমের কিছু নেতা যাঁরা এই ব্যাঙ্কের ভোটার নন, তাঁদের ব্যাঙ্কে ঢুকতে দেখে সাধারণ মানুষই প্রতিরোধ করেছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।” পুলিশের বিরুদ্ধে তোলা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে তদন্ত শুরু হবে।”

বাঁকুড়ার এই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কেই ২০১৬ সালে ১৫ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। ২০১৫-র ডিসেম্বরে দমদমের বাসিন্দা দেবাঞ্জন রায় নামের এক ব্রোকারকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ১৫ কোটি টাকা দেয় বন্ড কেনার জন্য। ওই টাকা নিয়ে দেবাঞ্জনবাবু বন্ড কেনার কিছু নথিপত্র ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। পরে বন্ড ভাঙাতে গিয়ে বিডিসিসিবি কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, দেবাঞ্জনবাবু তাঁদের জাল নথি দিয়েছিলেন।

ঘটনাটি জানার পরেও প্রথমে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা। সেই সময় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন জয়দীপবাবু। বিরোধীরা এই দুর্নীতি নিয়ে হইচই শুরু করলে ঘটনার মাস চারেক পরে বাঁকুড়া সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন জয়দীপবাবু। সিআইডি সেই অভিযোগের তদন্তে নেমে গত এপ্রিলে দেবাঞ্জনবাবুকে গ্রেফতার করে।

এ দিকে দুর্নীতির ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ওই সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি ভেঙে বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুকে বিশেষ আধিকারিক হিসেবে দায়িত্ব দেয় রাজ্য সমবায় দফতর। সম্প্রতি বিডিসিসিবি-তে নতুন করে পরিচালন কমিটি গড়ার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ২০ আগস্ট ওই নির্বাচন হওয়ার কথা।

মনোরঞ্জনবাবু এ দিন ওই দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে অভিযোগ করেন, “বিডিসিসি ব্যাঙ্কের দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছেন ব্যাঙ্কের তৎকালীন পরিচালন সমিতির লোকজন। বিরোধীদের পরিচালন সমিতি গড়ে উঠলে দোষীদের মুখোশ খুলে যাবে বলে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। তাই আমাদের মনোনয়নে বাধা দিচ্ছেন।” জয়দীপবাবুর অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, “৩৪ বছর ধরে সিপিএম রাজ্যটার কি সর্বনাশ করেছে তা সাধারণ মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। মানুষ ওঁদের আর কোনও দিনই বিশ্বাস করবেন না।”

মনোনয়ন পেশের পর পর দু’দিন বাধা পেয়েও দমতে নারাজ বাম নেতারা। আজ বুধবার শেষ দিনও তাঁরা মনোনয়ন পত্র জমা করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রতীপবাবু বলেন, “ব্যাঙ্কটাকে বাঁচাতেই হবে। আমরা মিছিল করে মনোনয়ন পেশ করতে যাব শেষ দিনে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement