—ফাইল চিত্র।
বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হল মল্লারপুর থানার কোট গ্রাম। তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রামে বোমাবাজি, ভাঙচুর, লুটের অভিযোগ তুলল বিজেপি। বোমাবাজিতে তাঁদের চার জন কর্মী জখম হয়েছেন বলেও দাবি স্থানীয় বিজেপি নেতাদের। তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা অভিযোগ, অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কাজে বাধা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অশান্তির পরিবেশও তৈরি করছেন বিজেপি কর্মীরা। বিজেপি কর্মীদের লাঠির এবং ধারাল অস্ত্রের আঘাতে দু’জন দলীয় কর্মী জখম হয়েছেন বলেও তৃণমূল নেতাদের দাবি।
সংঘর্ষের ঘটনায় কোনও পক্ষই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, পারিবারিক বিবাদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে গ্রামে বোমাবাজি হয়েছে। উভয় পক্ষের কয়েক জন আহত হয়েছেন। পুলিশ দু’দলের দু’জনকে জিঙ্গাসাবাদের জন্য আটক করেছে। অশান্তি এড়াতে গ্রামে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একশো দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই গ্রামে উত্তেজনা ছিল। রাতের দিকে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় গণ্ডগোল। বিজেপি কর্মীদের দাবি, পুলিশের সামনে বোমাবাজি করেন তৃণমূল কর্মীরা। ভাঙচুর করা হয় বিজেপি কর্মীর বাড়ি। এক কর্মীর দোকানে লুটপাট চলে। বিজেপি-র জেলা সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘গত ১৮ নভেম্বর মল্লারপুরে আমাদের সভা ছিল। সেখানে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন কোট গ্রামের অনেকে। তার পর থেকেই বেছে বেছে তাঁদের উপরে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল। ভাঙচুর, লুটপাট চালাচ্ছে।’’
বীরভূম জেলার মধ্যে মল্লারপুরে এমনিতেই বিজেপি-র শক্তি রয়েছে। তাই আগেও এখানে তাদের সঙ্গে শাসকদলের বিবাদ বেধেছে। গত ১১ নভেম্বর বড়চন্দ্রপুর গ্রামে বিজেপি এবং তৃণমূলের সংঘর্ষে কয়েক জন আহত হন। এ বার কোট গ্রামে উত্তেজনা ছড়াল। গ্রামের বিজেপি কর্মী হাসমত শেখের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের কাজে দুর্নীতির প্রতিবাদ করে কিছুদিন আগে মল্লারপুরের সভায় বেশ কয়েক জন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। সেই রাগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজেপি কর্মী সানোয়ার শেখ ও হাফিজ শেখের উপরে চড়াও হয় তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা নাসিম শেখ বিজেপি কর্মীদের গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। আমরা রাতে মল্লারপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি।”
হাসমতের আরও দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুল পাড়ার বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকিও দিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। ভয় পেয়ে গ্রামছাড়া হন বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মী। শুক্রবার সকালে ফের বোমাবাজি শুরু হয়। হাসমতের স্টুডিও ও মোবাইলের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ বিজেপি’র। আহত হন কয়েক জন কর্মী। বিজেপি-র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতা নাসিম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার স্ত্রী সায়রা বিবির কাছে পঞ্চায়েতে ৯৫০ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সুফিয়া বিবি। তার পর থেকেই ওরা নানা ভাবে গ্রামের তৃণমূল কর্মীদের উপরে অত্যাচার করছে। সম্প্রতি দ্বারকা নদের বাঁধ সংস্কারের কাজ একশো দিন প্রকল্পে ১৫ দিন আগে শুরু হয়েছে। সেই কাজেও ওরা বাধা দিতে চাইছে।’’ তাঁর অভিযোগ, বিজেপি-র লোকজন এ দিন সকালে একশো দিন প্রকল্পে কাজে যাওয়া কর্মী এবং সুপারভাইজারকে ঘিরে রাখে। পরে বোমাবাজিও করে।
ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা ময়ূরেশ্বরের বিধায়ক অভিজিৎ রায় দাবি করেছেন, পঞ্চায়েত ভোটে পরাজিত হয়ে বিরোধীরা একশো দিন প্রকল্পে মাটি কাটা নিয়ে গণ্ডগোল করে উন্নয়নে বাধা দিতে চাইছে।