আঁধার: মনোহর বাউরি। ছবি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।
দালাল চক্রের হাতে পড়ে নার্সিংহোমে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি হারানোর অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ায়।
পাড়া ব্লক এলাকার তিন ব্যক্তি ঝালদার একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি পুরুলিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। তার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে বুধবার নার্সিংহোমটিকে আপাতত ছানি অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
বুধবার পাড়ার নডিহা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খাটিয়ায় বসে প্রায় ৬০ বছর বয়সি নেপাল রাজোয়াড়। সামান্য জমির চাষে সংসার চলে না বলে ছেলেকে নিয়ে দিনমজুরি করেন তিনি। নেপালবাবুর কথায়, মকর সংক্রান্তির সময় তাঁদের গ্রামে গাড়িতে করে এক মহিলা এসে জানিয়েছিলেন, কারও সরকারি স্বাস্থ্য বিমার কার্ড থাকলে বিনাখরচে চোখের ছানি অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেবেন। মাঝে মধ্যেই জেলার কয়েকটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল এ ভাবেই গ্রামে শিবির করে লোকজনকে গাড়িতে চাপিয়ে ছানি অস্ত্রোপচার করিয়ে নিয়ে আসে। তাই ওই মহিলার কথায় তাঁদের সন্দেহ হয়নি। তিনি নির্দিষ্ট দিনে এসে নেপালবাবুকে ঝালদার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘‘পাড়া এলাকা থেকে আমাদের তিন বৃদ্ধকে ওই মহিলা নিয়ে যান। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার কার্ড দেখে ওরা অস্ত্রোপচারের করে। বাড়িও ফিরিয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে বাঁ চোখটায় আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না।’’ নেপালবাবুর স্ত্রী ফুলুদেবী বলেন, ‘‘আগে ছানিতে ঢাকা ঝাপসা চোখেও মানুষটা কাজ করতে পারত। কিন্তু এখন তাও পারে না। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেল।’’
চরপটিয়া গ্রামের মনোহর বাউরি ওই মহিলার সঙ্গে গিয়ে ডান চোখে অস্ত্রোপচার করানন। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা অস্ত্রোপচারের পরে ওষুধ ও কালো চশমাও দিয়েছিল। বলেছিল কয়েকদিন ওষুধ লাগাতে ও চশমা পরে থাকতে হবে। তারপর দু’মাস হয়ে গেল, কিন্তু চোখে আর দেখতে পাচ্ছি না।’’ বাথানবাড়ির কুশ বাউরিও ওই নার্সিংহোমে একই ভাবে গিয়ে ছানি অস্ত্রোপচারের পরে দৃষ্টিহীন হয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁরা তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
ঝালদায় বাঘমুণ্ডি রোডের ওই নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চক্ষু অস্ত্রোপচারের বিভাগ রয়েছে। নার্সিংহোমের মালিক বীরেন চন্দ্র ও মুকেশ চন্দ্র দাবি করেন, ‘‘এখানে অস্ত্রোপচারের পরে কেউ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বলে শুনিনি। ওই তিন জন যে এখানে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন তাও আমরা নিশ্চিত নই। আমাদের নার্সিংহোমের হয়ে কোনও মহিলাও রোগী আনতে গ্রামে গ্রামে ঘোরেন না।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘অভিযোগটি পেয়েই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞকে রেখে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে। আপাতত ওই নার্সিংহোমকে চোখের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তদন্তে গাফিলতি প্রমাণিত হলে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’