পুরসভায় সম্ভাব্য ক্ষমতার হাতবদলকে কেন্দ্র করে সরগরম ঝালদা।
কংগ্রেস ও বাম কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে এবং নির্দল কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের ঝালদা পুরসভার দখল পাওয়া এখন কিছু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে, ঝালদার কংগ্রেসের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা অবশ্যম্ভাবীই ছিল। বৃহস্পতিবার তা-ই হল। পুরপ্রধান মধুসূদন কয়ালের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন দলত্যাগী সাত কাউন্সিলর। তৃণমূলের দল ভাঙার কৌশলের পাল্টা হিসাবে এ দিনই বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব সভা করে দাবি তুললেন, যাঁরা দল ছেড়েছেন, তাঁদের পদত্যাগ করে তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচনে জিতে আসতে হবে।
এ দিন প্রশাসনের কাছে মধুসূদনবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা জমা দিয়েছেন কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে যাওয়া পাঁচ জন এবং দুই নির্দল কাউন্সিলর। তবে, এই অনাস্থার বিষয়টি আগেই আঁচ পেয়েছিল কংগ্রেস। তাই অনাস্থা আসার দিনই দলত্যাগী সদস্যদের বিরুদ্ধে বামেদের সঙ্গে নিয়ে ঝালদায় বড় মাপের প্রতিবাদ ও ধিক্কার মিছিল করে কংগ্রেস। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক তথা পুরুলিয়া জেলা কংগ্রের সভাপতি নেপাল মাহাতো, ফরওয়ার্ড ব্লকের ঝালদা জোনাল কমিটির সম্পাদক মঙ্গল মাহাতো, সিপিএমের স্থানীয় নেতা বৈদ্যনাথ কৈবর্ত্য প্রমুখ। তবে এ দিনের কর্মসূচিকে অরাজনৈতিক চেহারা দিতে মিছিল হয়েছে ‘ঝালদা নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে। মিছিল শেষে ঝালদা শহরের হাটতলায় পথসভা হয়েছে। সেই সভায় নেপালবাবু দলত্যাগীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘যাঁরা স্রেফ ক্ষমতার লোভে একটা দলের প্রতীকে জিতে অন্য দলে গিয়েছেন, তাঁদেরকে পদত্যাগ করে তৃণমূলের প্রতীকে জিতে আসতে হবে। এই দাবিতে আমাদের কর্মীরা এ বার ওই সদস্যদের বাড়ির সামনেই ধর্নায় বসবে!”
বস্তুত, বারবার অনাস্থা আসা ঝালদা পুরসভায় গত বছর পুর-নির্বাচনের পরে একটি স্থায়ী বোর্ড তৈরি হয়েছিল। ১২ আসনের এই পুরসভায় ৭টি আসনে কংগ্রেসকে জিতিয়ে এনেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছিল দু’টি আসন। একটিতে জিতেছিল সিপিএম। বাকি দু’টি আসনে জয়ী হন নির্দল প্রার্থীরা। ১২টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একটিতেও জিততে পারেনি তৃণমূল! পুরপ্রধান হন কংগ্রেসের মধুসূদনবাবু। উপপুরপ্রধান কংগ্রেসেরই মহেন্দ্রকুমার রুংটা।
কিন্তু, বছর ঘুরতেই ফের টালমাটাল পরিস্থিতি ঝালদা পুরসভায়! কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লকের পাঁচ সদস্যকে ভাঙিয়ে এবং দুই নির্দল কাউন্সিলরকে নিজেদের দিকে টেনে বিরোধীদের জোর ধাক্কা দিয়েছে শাসকদল। সম্প্রতি ওই পাঁচ কাউন্সিলর কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে শাসকদলে যোগ দিয়েছেন।
তার পরেই ঝালদা পুরসভা নিজেদের দখলে আনতে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। তারই ফলশ্রুতিতে এ দিন মধসূদনবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা এসেছে।
এই অবস্থায় সরাসরি ভোটারদের সহানুভূতি পেতে এ দিন দল ভাঙানোর বিষয়টি নিয়ে পথে নেমেছে কংগ্রেস ও বামেরা। যাঁরা দলত্যাগ করেছেন, তাঁদেরকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা দিতেই এ দিন প্রতিবাদ ও ধিক্কার মিছিল করেছে দুই বিরোধী দল। পথসভায় নেপালবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূল বিরোধী দলগুলির সদস্যদের প্রলোভন দেখিয়ে বা প্রভাবিত করে দল ভাঙানোর ঘৃণ্য রাজনীতি শুরু করেছে।” প্রসঙ্গত দলত্যাগীদের অন্যতম, কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রদীপ কর্মকার দাবি করেছেন, তাঁরা এলাকার উন্নয়ন করতেই তৃণমূলে গিয়েছেন। এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রদীপবাবুদের বিঁধেছেন নেপালবাবু। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘প্রদীপবাবু একবার কংগ্রেসের, একবার তৃণমূলের হয়ে পুরপ্রধান ছিলেন। কোন উন্নয়ন করেছেন তিনি?” কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্যদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ মদত করেছে বলেও এ দিন অভিযোগ তুলেছেন নেপালবাবুরা।
তাঁরা পদত্যাগ করবেন না বলে এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন প্রদীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ঝালদার উন্নয়নের স্বার্থেই পুরসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে কংগ্রেসে নীতিগত ভাবেই বোর্ড চালানোর ক্ষমতা হারিয়েছে। পুরপ্রধানের অপসারণ চেয়ে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছি।” বিরোধী দলের নির্বাচিত সদস্যদের ভাঙানোর রাজনীতি শুরু করেছে বলে কংগ্রেস যে অভিযোগ করেছে, তা মানতে নারাজ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কংগ্রেস বা বাম সদস্যদের ভাঙাতে যাইনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য জুড়ে যে উন্নয়নের জোয়ার শুরু হয়েছে, তাতে সামিল হওয়ার জন্য ঝালদা পুরসভার কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক ও নির্দল সদস্যেরা স্বেচ্ছায় আবেদন জানিয়েছিলেন। আবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের দলে নেওয়া হয়েছে।’’