নেতাকে ফোনে হুমকি, অস্বস্তিতে শাসক

তিনি শাসকদলের ব্লক সভাপতি। নতুন অঞ্চল কমিটি গড়তে দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেই মোবাইলে এল হুমকি ফোন। বৈঠকে যোগ দিতে গেলেই বোমা মেরে খুন করা হবে তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৬
Share:

(বাঁ দিকে) অভিযোগকারী নারায়ণ চন্দ্র। (উপরে) এই নম্বর থেকেই মিলেছে হুমকি। —নিজস্ব চিত্র

তিনি শাসকদলের ব্লক সভাপতি। নতুন অঞ্চল কমিটি গড়তে দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেই মোবাইলে এল হুমকি ফোন। বৈঠকে যোগ দিতে গেলেই বোমা মেরে খুন করা হবে তাঁকে। ওই দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই তৃণমূল নেতা। যদিও নিরাপত্তার অভাবে নিজেরই ডাকা ওই বৈঠকে তাঁর আর যোগ দেওয়ার সাহস হয়নি। তাঁর অবর্তমানেই এলাকার দু’টি নতুন অঞ্চল কমিটি গড়ে নিল বিরোধী গোষ্ঠী!

Advertisement

শনিবার ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের ওই ঘটনায় শাসকদলের চিরাচরিত অন্তর্দ্বন্দ্বেরই ছায়া দেখছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। শাসকদল যদিও তা মানতে নারাজ। এমনকী, দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি দলের ওই ব্লক সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রও। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘কে বা কারা কী কারণে খুনের হুমকি দিল, বলতে পারব না। কিন্তু আমি দলের কমিটি গঠনের মিটিংয়ে গেলে আমাকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। তার জন্যই আমি বৈঠকে যাইনি। ফোনের নম্বর-সহ আমি পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছি। তারাই তদন্ত করে দেখুক কারা এর সঙ্গে জড়িত। জেলা নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’’ নারায়ণ সরাসরি কিছু বলতে না চাইলেও তাঁর এক অনুগামীর বক্তব্য, ‘‘এ তো সহজেই অনুমান করা যায়। দলেরই কেউ এর সঙ্গে জড়িত। দলের ব্যাপার নিয়ে দলের লোক ছাড়া কার এতক মাথা ব্যথা হবে?’’

ঘটনা হল, বিভিন্ন সভা সমাবেশে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ওই এলাকায় কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই ব্লক সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রের সঙ্গে জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডলের অনুগামীদের বিবাদের চোরাস্রোত বইছে। সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটের আগে তা প্রথম প্রকাশ্যে এসে পড়ে। ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীপদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন জটিল মণ্ডল। কিন্তু, দল প্রার্থী করে অভিজিৎ রায়কে। সেই সময় ওই প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের দাবিতে দলের স্থানীয় ষাটপলশা আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। ওই কর্মসূচি সংঘটিত করার অভিযোগ ওঠে জটিলের বিরুদ্ধে। এমনকী, অনুগামীদের ভোটের কাজ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ জারি করারও অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই নির্দেশ অমান্য করে নারায়ণবাবু, ব্লক যুব সভাপতি চন্দ্রনীল ঘোষ-সহ অধিকাংশ নেতা-কর্মী ভোটের কাজে নেমেছিলেন। পরে অবশ্য কার্যত কোণঠাসা জটিলকেও অভিজিতের হয়ে ভোট প্রচারে নামতে দেখা যায়।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, রবিবারের নির্ধারিত বৈঠকে দলের ময়ূরেশ্বর ও কলেশ্বর অঞ্চল কমিটি গঠনের কথা ছিল। ওই দিন ব্লক সভাপতির অনুপস্থিতিতেই দু’টি ক্ষেত্রেই পাঁচ জন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, নতুন গঠিত কমিটিতে ব্লক সভাপতির অনুগামীরা ঠাঁই পাননি। আর যাঁদের নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই এলাকার রাজনীতিতে জটিল-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তা দেখেই ব্লক সভাপতির অনুগামীরা অভিযোগ করছেন, নারায়ণবাবু যাতে নিজের অনুগামীদের ওই কমিটিতে ঢোকাতে না পারেন, তার জন্যই সেখানে গেলে তাঁর প্রাণনাশ করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। জটিল নিজে যদিও এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নেই। হুমকির কথাও জানি না। ব্লক সভাপতি আমাদের কিছু জানাননি। কমিটি গঠনের মিটিং তিনি-ই ডেকেছিলেন। তার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি বলেই শুনেছিলাম।’’

হুমকির কথা নারায়ণবাবুর থেকে জেনেছেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য তথা এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ রায়। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। দলীয় ভাবেও আমরা জেলাস্তরে বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’

অন্য দিকে পুলিশ জানায়, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মোবাইল নম্বর দেখে তার মালিকের পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। নম্বরটি ঘটনার পর থেকেই বন্ধ করা রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement