অন্য বার এই রাস্তায় তিল ধারণের জায়গা থাকে না। মৌতড়ে। নিজস্ব চিত্র।
গত বছরে প্রায় হাজার ষাটেক মানুষের ভিড় জমেছিল। এ বারে তার অর্ধেক মানুষও রঘুনাথপুরের মৌতড় গ্রামের কালীপুজোয় উপস্থিত হলে সংক্রমণ কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিল পুলিশ-প্রশাসন। তবে তাদের স্বস্তি দিয়ে এ বারে বেশ কমই দর্শনার্থী দেখল কালীপুজোর মৌতড়। পুজোর উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে ভিড় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা তরুণ সঙ্ঘের সদস্য ও পুলিশের হিসেব, শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত হাজার বারো-তেরো মানুষের পা পড়েছে মন্দির চত্বরে। মৌতড় গ্রামের ষোলাআনার সভাপতি দিলীপ চক্রবর্তী বা তরুণ সঙ্ঘের সদস্য উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়দের কথায়, ‘‘কালীপুজোর রাতের যে ভিড়ের সঙ্গে স্থানীয়েরা পরিচিত, তা এ বারে দেখাই যায়নি।”
করোনা-পরিস্থিতিতে মৌতড়ে ভিড় যে কম হবে, তা নিয়ে কিছুটা নিশ্চিত ছিলেন উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলই। তাদের মতে, ভিন্ জেলা ও পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে বহু দর্শনার্থী আসেন মৌতড়ে। ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁদের পক্ষে আসা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া, দীর্ঘ লকডাউনের কারণে অনেকেরই আর্থিক সঙ্গতি হয়নি, আগের মতো গাড়ি ভাড়া করে মৌতড়ে আসার। তার প্রভাব পড়েছে বলি দেওয়ার সংখ্যাতেও। গত বারে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো বলি হলেও এ বারে সংখ্যাটা ছিল বারোশোর মতো, জানান উদ্যোক্তারা।
কেমন ছিল ভিড়ের ছবিটা? মন্দির লাগোয়া এলাকায় গত সাড়ে তিন দশক ধরে পুজোর সামগ্রী বিক্রি করা পদ্মনাভ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এত বছরে এমন কম লোক মৌতড়ে পুজোর রাতে এসেছেন, দেখেনি। একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। অন্য বারে পুজোর সব সামগ্রী বিক্রি হয়ে গেলেও এ বারে অর্ধেকও হয়নি।’’ তবে ভিড় কম হওয়ায় অনেক কম সময়ে পুজো দেওয়া গিয়েছে বলে খুশি অনেকেই। রঘুনাথপুর ২ ব্লকেরই লড়িরা গ্রামের রিঙ্কু ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘পুজো দিতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।”
দর্শনার্থীর সংখ্যা তুলনায় কম হলেও করোনা পরিস্থিতিতে দূরত্ব-বিধি না মানার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার সকালে মৌতড়ে দেখা গেল, এক সঙ্গে বেশ কিছু লোক ঘেঁষাঘেঁষি করে মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। তরুণ সঙ্ঘের কিছু সদস্যের আক্ষেপ, ‘‘দূরত্ব-বিধি মানা ও মাস্ক পরার জন্য প্রচার চলেছে। তার পরেও মানুষজন সচেতন না হলে, কী আর করা যাবে!’’