চমকের পর চমক! অন্তত বাঁকুড়া পুরসভায় তৃণমূলের পুরবোর্ড সে কথাই জানান দিচ্ছে।
যাবতীয় জল্পনাকে ভুল প্রমাণ করে পুরপ্রধান হিসেবে একেবারে আনকোরা নাম ঘোষণা করে প্রথম চমক দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। এ বার বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (সিআইসি) বা পুরপ্রধান পারিষদ গঠনেও সমস্ত হিসেব ওলট-পালট। প্রথম বার ভোটে জিতেই সরাসরি সিআইসি-র সদস্য হয়েছেন নতুন দুই কাউন্সিলর। এঁদের মধ্যে এক জন আবার নির্দল হয়ে জিতে পরে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন! মোদ্দা কথায়, বাঁকড়া পুরসভায় শম্পা দরিপা বা অলকা সেন মজুমদারদের দাপটের দিন বোধহয় শেষ— আড়ালে এমন কথাই বলছেন শহরের তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশ।
সম্প্রতি গঠন হয়েছে বাঁকুড়া পুরসভার সিআইসি। পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও উপ-পুরপ্রধান দিলীপ অগ্রবাল ছাড়া সিআইসি-র বাকি তিন সদস্য হলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অভিজিৎ দত্ত, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল হয়ে জিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর আজিজুল রহমান এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডের দু’বারের তৃণমূল কাউন্সিলর তনুশ্রী ঘোষ সিন্দাল। অভিজিৎবাবু জল ও বিদ্যুৎ, আজিজুল রহমান পয়ঃপ্রণালি ও তনুশ্রীদেবী পূর্ত বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন। নতুন পুরপ্রধান বলেন, “অভিজ্ঞতার সঙ্গে নতুনত্বের মিশেল ঘটিয়েই আগামী দিনে পুরসভাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তাই পাঁচ জন সিআইসি-র মধ্যে তিন জন পুরনো ও দু’জন নতুনকে মুখকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’’
তবে সিআইসি নির্বাচন ঘিরেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে প্রাক্তন পুরপ্রধান শম্পা দরিপা ও প্রাক্তন উপপুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদারের শিবিরে। গত পুরবোর্ডের এই দুই শীর্ষ নেত্রীর যাবতীয় ক্ষমতাই কার্যত কেড়ে নেওয়া হল বলে মনে করছেন তাঁদের অনুগামীরা। এ বার পুরভোটে বাঁকুড়ায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তৃণমূল। ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি আসন পেয়েছিল তারা। অন্য দিকে বামফ্রন্ট ৫, বিজেপি ২, কংগ্রেস ১ ও নির্দল চারটি আসন পেয়েছিল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে তিন নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলেও পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়েও দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কিন্তু শম্পাদেবী বা অলকাদেবীকে না বেছে মহাপ্রসাদবাবুকে পুরপ্রধান করে দল। এমনকী, সিআইসি-তেও শম্পাদেবী নিজে বা তাঁর পক্ষের কোনও কাউন্সিলর স্থান পাননি। একই অবস্থা অলকাদেবীর। তাঁর এক অনুগামীর কথায়, “আমরা আশা করেছিলাম ‘দিদি’ সিআইসি-তে থাকবেন। কারণ উনি দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। কিন্তু অনভিজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হল।’’ এ ব্যাপারে অলকাদেবীর সাবধানী মন্তব্য, “দল যা করেছে, আমরা তা মেনে নিয়েছি।’’ তবে জেলা তৃণমূলের এক নেতার অভিযোগ, “পুরসভায় ক্ষমতা ধরে রাখতেই নিজের অনুগামীদের সিআইসি-তে বসিয়েছেন জেলা তৃণমূলের কিছু শীর্ষ নেতা।’’ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাঁকুড়া পুরসভার উন্নয়নের কথা ভেবেই দলীয় বৈঠক করে সিআইসি ঠিক করা হয়েছে। এখানে কারও ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কোনও ব্যাপার নেই।’’
প্রথমবার কাউন্সিলর হয়েই সি আইসির গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব পেয়ে খুশি আজিজুল, অভিজিৎবাবুরা। আজিজুলের কথায়, “প্রথমবারেই এত বড় দায়িত্ব পাব তা ভাবতে পারিনি। জল নিকাশির অব্যবস্থা ভোট প্রচারে তুলেছিলাম। এ বার দায়িত্ব পেয়ে সমস্যা মেটাতে চাই।’’ অভিজিৎবাবুর কথায়, “জল সমস্যা মেটানো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’’