শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইটভাটা। বাঁকুড়ার ভূতশহরে অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
ঝড়ের দাপটে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল রবিবার। মঙ্গলবারও সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারল না বাঁকুড়া জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরুলিয়া জেলার একাংশও।
এ দিনও বাঁকুড়া জেলার বিস্তির্ণ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে দিনভর। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাত্রসায়র ব্লক। ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। রবিবার ৬৪ কিলোমিটার বেগে কালবৈশাখী বয়ে যায় জেলার বেশ কিছু ব্লকের উপর দিয়ে। এর জেরে জেলা জুড়ে কয়েকশো বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। গাছ পড়ে বেশ কিছু জায়গায় ছিঁড়ে যায় তারও। রবিবার বিকেল থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে গোটা পাত্রসায়র ব্লক। বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর সূত্রে খবর, বিষ্ণুপুর থেকে যে হাইটেনশন লাইন পাত্রসায়রে এসেছে রবিবারের ঝড়ে তা ছিঁড়ে গিয়েছে। ব্লকের বেশ কয়েক জায়গায় বৈদ্যুতিন খুঁটি কোথাও ভেঙে পড়েছে, কোথাও হেলে গিয়েছে। যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ।
টানা তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকাবাসীদের মধ্যেও। বন্ধ হয়ে গিয়েছে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ। মিনি সাব মার্সিবল, পাম্প কিছুই চলছে না। অন্ধকারে ডুবে রয়েছে গোটা এলাকা। এর প্রভাব পড়ছে ক্ষুদ্র শিল্পেও। পাত্রসায়রের একটি ইট তৈরির কারখানার মালিক মনিরুল ইসলাম বলেন, “গত দু’দিন ধরে বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির মুখে পড়লাম।’’ পাত্রসায়রের বাসিন্দা বাপ্পা দাসের ক্ষোভ, “গত দু’দিন ধরে এলাকায় জল আসেনি নলকূপে। চরম ভোগান্তি হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে অনেকেই মোটা টাকা ভাড়া গুনে জেনারেটর বাড়িতে এনে সাবমার্সিবল চালাচ্ছেন।’’ মঙ্গলবার দুপুরে অবশ্য পাত্রসায়র পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির তরফে মুসলিম পাড়ার কিছু এলাকায় জলের ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। কিছু এলাকায় পঞ্চায়েতের তরফে জেনারেটর দিয়েও সাবমার্সিবল চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাজপড়ে মানবাজারে পুড়ে গিয়েছে বিএসএনএল টাওয়ারের যন্ত্রাংশ।
তার জেরে লেনদেন বন্ধ ব্যাঙ্কে। — নিজস্ব চিত্র।
পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পাত্রসায়র পঞ্চায়েত প্রধান সুব্রত কর্মকার বলেন, “টানা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জেরে জনজীবন বিঘ্নিত। বিদ্যুৎ দফতরের কাছে আমরা দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে পরিষেবা চালু করার দাবি জানিয়েছি। সাধারণ মানুষকে যতটা সম্ভব পরিষেবা দেওয়া যায়, সে জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ বাঁকুড়া জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার চন্দ্রশেখর সেনগুপ্ত বলেন, “ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমাদের দফতরের। পাত্রসায়র ব্লকেই প্রায় ২০টি বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা মেরামতির কাজ শুরু করেছি।’’ আজ বুধবারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, রবিবার টাওয়ারের মাথায় বাজ পড়েছিল। তাতেই যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যায়। যার ফলে বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা অচল হওয়ায় বিপাকে পড়েন গ্রাহকেরা। লিঙ্ক না ব্যাঙ্ক, ডাকঘরে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। মানবাজারের টেলিকম ম্যানেজার বিনোদ যাদব বলেন, ‘‘ওই দিন বিকেলে ইন্দকুড়িতে বিএসএনএলের টাওয়ারে বাজ পড়ায় যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়। ফলে মানবাজার, পুঞ্চা, বোরো, বরাবাজার, বান্দোয়ান-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ল্যান্ডলাইন ও মোবাইল ফোন অচল হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক হয়।’’ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির মানবাজারের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র বিজন দুয়ারি বলেন, ‘‘সোমবার থেকে লিঙ্ক না থাকায় আমাদের অফিসে বিল জমা করতে পারিনি। মঙ্গলবার বিকেলের পর অবস্থার খানিকটা উন্নতি হয়েছে।’’ মানবাজারে একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার দেবচাঁদ সাহু জানান, লিঙ্ক না থাকায় দু’দিন ধরে লেনদেন প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে লিঙ্ক ফিরলেও গতি খুব মন্থর। ফলে কাজে খুব সমস্যা হয়েছে।